শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ইরানে ইসরাইলি অভিযান

হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন মোসাদ প্রধান

নথিপত্র চুরি, পরমাণু বিজ্ঞানী ফাখরিজাদেহ হত্যাকান্ডেও ইসরাইলি সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত এমন মন্তব্য বিস্ময়কর, মত মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০
সাবেক মোসাদ প্রধান ইয়োশি কোহেন

ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কীভাবে ইরানে অভিযান পরিচালনা করে আসছে, তার রোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেছেন মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব থেকে সদ্যবিদায় নেওয়া ইয়োশি কোহেন। তেহরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে কীভাবে নথিপত্র চুরি করা হয়েছিল, শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি। যখন ইরানে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে ইসরাইল বারবার অস্বীকার করে আসছে, ঠিক তখনই হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি

২০১৮ সালে পরমাণু আর্কাইভে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিপত্র চুরি করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল এবং দেশটির পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যাকান্ডের সঙ্গেও ইসরাইলি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব থেকে গত সপ্তাহে অবসরে যান ইয়োশি কোহেন। ইসরাইলি চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে তিনি এই সাক্ষাৎকারটি দেন। এই সাক্ষাৎকার সম্পর্কে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক রাফি বের্গ বলেন, 'মোসাদের সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার দেওয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেওয়া নতুন নয়। কিন্তু ইয়োশি কোহেন এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা বিস্ময়কর।'

এই প্রথম তিনি স্বীকার করার কাছাকাছি গেছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতার পেছনে ইসরাইল জড়িত রয়েছে। তবে অনেক হিসাব-নিকাশ করে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হয়েছে এবং সেটি ইসরাইলের সামরিক সেন্সরও পার হয়ে এসেছে। ২০১৫ সালে মোসাদের প্রধান হিসাবে ইয়োশি কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালে তিনি এই গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি উলেস্নখ করেছেন, এই পেশায় থাকার সময় তার শত শত পাসপোর্ট ছিল। তার সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে রোমহর্ষক অংশ ছিল, যখন তিনি ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে চুরির বিস্তারিত জানাতে শুরু করেন।

২০১৮ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া এসব নথির কথা উলেস্নখ করে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এবং অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি তাদের আছে। কিন্তু ইরান বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কোহেন বলেন, ইরানে ওই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাদের দুই বছর লেগেছে। সেখানে ২০ জন মোসাদ এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজনও ইসরাইলি নাগরিক নন। তেল আবিবের একটি কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অপারেশন নজরদারি করতেন মোসাদ প্রধান। সাবেক এই মোসাদ প্রধান বলেন, 'যখন সেসব নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হতো, তা ছিল আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর।'

ওই অভিযানে অংশ নেওয়া সবাই বেঁচে ফিরে এসেছেন এবং ভালো আছেন। যদিও তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে বের করে আনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই হাজার হাজার নথিপত্র পাওয়ার কথা ইসরাইল প্রকাশ্যেই বলে আসছে। কিন্তু কোহেন আরও কিছু অপারেশনে মোসাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ইসরাইলি এজেন্টরা করেছে বলে গুঞ্জন ছিল।

সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের বিষয়ে বলেন কোহেন। ইরান জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ওই নাশকতার ঘটনায় নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে আগুন লাগে। এই বছরের এপ্রিল মাসে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিনই কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আবার নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব ঘটনায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে 'পরমাণু সন্ত্রাসের' অভিযোগ আনে ইরান। কোহেন বলেন, তিনি ওই পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কে এত ভালোভাবে জানেন, যেখানে ঘূর্ণায়মান যে সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, সেখানেও তাকে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে নিয়েও কথা বলেন। ইরানের এই পরমাণু বিজ্ঞানী গত নভেম্বরে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি সড়কে আততায়ীর হামলায় নিহত হন। ওই হামলার জন্য প্রকাশ্যেই ইসরাইলকে দায়ী করে আসছে ইরান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে