চীনের বিরুদ্ধে একাট্টা জোট

জি-৭ নেতাদের কঠোর বার্তা চীনের

বিশ্বে কয়েক দেশের খবরদারির দিন শেষ, কড়া হুঁশিয়ারি বেইজিংকে ঠেকাতে বিশাল পরিকল্পনা জি-৭ দেশগুলোর

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
চীন শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭ এর নেতাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দুনিয়ার ভাগ্য অল্প কয়েকটি দেশের গোষ্ঠী নির্ধারণ করবে- এমন দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালের কারবিস বে অবকাশযাপন কেন্দ্রে জি-৭ সম্মেলনে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর একাট্টা হওয়ার আগ্রহের বিপরীতে রোববার চীন এই হুঁশিয়ারি দিল। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা লন্ডনে চীন দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, 'সেসব দিন, যখন অল্প কয়েকটি দেশের তৈরি করা ছোট একটি গোষ্ঠীর হুকুমে বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো ঠিক হতো, সেটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, বিভিন্ন দেশ, তা বড় বা ছোট, শক্তিশালী বা দুর্বল, ধনী বা দরিদ্র যাই হোক না কেন, সব সমান। এ কারণেই বৈশ্বিক বিষয়গুলো সব দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত।' ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর বিশ্বের নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাবকে সাম্প্রতিক সময়ের ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। গত চার দশকে অর্থনীতি ও সামরিক খাতে দেশটির অভাবনীয় উন্নতির পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্রমবর্ধমান 'আগ্রাসী' আচরণের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া খুঁজতে চলতি সপ্তাহেই দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে মিলিত হন জি-৭ এ শীর্ষ নেতারা। চীনের বাড়তে থাকা প্রভাবের বিপরীতে ধনী দেশগুলোও যে বিকল্প প্রস্তাব হাজির করতে পারে, সেটা বিশ্বকে দেখাতে চান যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও জাপানের নেতারা। শনিবার চীন-সংক্রান্ত এক আলোচনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনি বেইজিংয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জোটের নেতাদের সমন্বিত পন্থা বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। জি-৭ জোট উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একটি অবকাঠামো প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা চীনা প্রেসিডেন্টের কয়েকশ ট্রিলিয়ন ডলারের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' উদ্যোগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হতে পারে। বেইজিং বরাবরই তার দৃষ্টিতে পশ্চিমা দেশগুলোর চীনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার বিরুদ্ধে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বের অনেক বড় শক্তি এখনো অচল ঔপনিবেশিক মানসিকতা আঁকড়ে আছে বলেও অভিযোগ তাদের। এদিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্য জোট নেতারা আশা করছেন, তাদের এই পরিকল্পনা যা 'বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড' (বি৩ডবিস্নউ) নামে পরিচিতি পেয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অবকাঠামো নির্মাণে একটি অংশীদারিত্ব অর্জনের পথ করে দেবে। এ জন্য তাদের চার লাখ কোটি ডলারের তহবিল যোগান দিতে যাচ্ছে জি-৭, যা ২০৩৫ সাল নাগাদ এসব দেশের অবকাঠামো খাতের জন্য দরকার। বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'এটা শুধু চীনকে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের মান ও আমাদের ব্যবসা করার পদ্ধতি প্রতিফলিত হয়- এমন কোনো ইতিবাচক বিকল্প আমরা প্রস্তাব করিনি।' যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ও মানবাধিকার বিষয়ে চীনের প্রতি একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে জি-৭। হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, লিঙ্গ সমতায় বেসরকারি খাতের মূলধন কাজে লাগাতে বি৩ডবিস্নউ উদ্যোগকে ব্যবহার করবে জি-৭ এবং এর মিত্ররা। তবে এই পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করবে অথবা প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ মূলধন ব্যবহার করা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে সেসব বিষয় পরিষ্কার করা হয়নি। উলেস্নখ্য, ২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্বোধন করেন জিনপিং। এরই মধ্যে ১০০টির বেশি দেশ এই প্রকল্পে চীনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব চীনের 'অস্বচ্ছ, দুর্বল পরিবেশগত ও শ্রম মান এবং নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের' বিপরীতে একটি ইতিবাচক বিকল্প সামনে আনতে পারেনি, যা অনেক দেশকেই বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।