মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা

সংলাপ বা সংঘাতে চোখ কিমের

কিমের বক্তব্য আয়নায় বাইডেনের বক্তব্যেরই প্রতিচ্ছবি
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উন -ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন। তিনি বলেছেন, তার দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'সংলাপ বা সংঘাত' অথবা দু'টির জন্যই প্রস্তুত হতে হবে। বিশেষ করে সংঘাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মাধ্যমে এই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করলেন কিম। এর আগে ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করলে দেশটি তা নস্যাৎ করে দেয়। সংবাদসূত্র :বিবিসি, আল-জাজিরা

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে তার পরমাণু অস্ত্র সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু পিয়ংইয়ং বারবার সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে তার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সম্প্রতি দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে শুরু হওয়া শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে কিম বলেন, 'আমাদের রাষ্ট্রের সম্মান রক্ষায় এবং উন্নয়নের ধারা নিরপেক্ষভাবে বজায় রাখার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত ঘটলে তার জন্য পুরোমাত্রায় প্রস্তুত থাকতে হবে।' উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সংবাদ সংস্থা 'কেসিএনএ'র খবর অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতেও তাদের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, 'কোনোরকম ঘটনা ঘটলে উত্তর কোরিয়া ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং কোরীয় উপদ্বীপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীল করার ব্যাপারে মনোযোগ দেবে।' এই মন্তব্য করার দিন কয়েক আগে কিম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছিলেন, দেশটিতে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

এর আগে সদ্য শেষ হওয়া জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেনসহ যোগদানকারী নেতারা উত্তর কোরিয়াকে তার পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ করার এবং আবারও সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানান। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কিমের সম্পর্ক এখন পর্যন্ত উত্তেজনা ও উদ্বেগে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া মার্কিন নির্বাচনের আগে কিমকে একজন 'গুন্ডা' হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে উত্তর কোরিয়া তাদের শক্তিমত্তা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে বিশাল এক সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে এবং সেখানে তাদের একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে।

ওয়াশিংটনও সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া বিষয়ে তাদের নীতির পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা শেষ করেছে এবং বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার কাজ অব্যাহত রাখবে। বাইডেন কূটনৈতিক পথে এগোনোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে কঠোর প্রতিরোধের প্রতিশ্রম্নতিও ব্যক্ত করেছেন।

হোয়াইট হাউসের তথ্য সচিব জেন সাকি বলেন, 'একটা বিশাল দর-কষাকষির মাধ্যমে অর্জনের নীতিতে আমরা আগ্রহী নই, একই সঙ্গে কৌশলগত ধৈর্য্যের ওপরও আমরা আস্থা রাখতে চাই না।' তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে বাস্তবসম্মতভাবে এগোতে চায়, যে পথ তাদের জন্য খোলা আছে সেই পথে। ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে চায়।' সাকি আরও বলেন, তারা 'বাস্তবসম্মত অগ্রগতি' অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চান।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম এর আগে বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন। কিন্তু পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনায় শেষ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়নি।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক লেইফ-এরিক ইসলি বাইডেনের পরিকল্পনাকে বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাব বুঝতে চান এবং পাশাপাশি ধাপে ধাপে কূটনৈতিক সংলাপ চালাতে চান। কিম একই সঙ্গে সংলাপ আর সংঘাত এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার যে কথা বলছেন, তার সঙ্গে পুরোপুরি মিল রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে মার্কিন দ্বৈতনীতির বার্তার- 'কূটনীতি আর কঠোর প্রতিরোধ'। অর্থাৎ, কিমের বক্তব্য আয়নায় বাইডেনের বক্তব্যেরই একটা প্রতিচ্ছবি।

এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে উত্তর কোরিয়া যে বার্তা দিতে চাইছে, সেটা হলো- নতুন মার্কিন প্রশাসন কী করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষার কৌশল। তবে কিমের এই মিশ্র বার্তার পেছনে উত্তর কোরিয়া যে আলোচনায় ফিরতে আগ্রহী, তার একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে