খাশোগিকে সম্ভবত হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে

দেহাবশেষের সন্ধানে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে জঙ্গল ও একটি শহরে তল্লাশি চালাচ্ছে তুরস্ক

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সৌদি আরবের রাজপরিবারের শাসকদের কট্টোর সমালোচক ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির সম্ভবত হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ‘নিউইয়কর্ টাইমস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তার ধারণা, সম্ভবত জামাল খাশোগি মারা গেছেন। তবে প্রকৃত ঘটনা কী ছিল, তা তিনি এখনো জানতে চান। খাশোগির নিখেঁাজের পর তার পরিণতি নিয়ে এটিই ট্রাম্পের প্রথম এ ধরনের বক্তব্য। ‘খাশোগি সম্ভবত মারাই গেছেন’ মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার কাছে এমনটিই মনে হয়েছে। এটি দুঃখজনক।’ এদিকে, খাশোগির দেহাবশেষের সন্ধানে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে একটি জঙ্গল ও মমর্র সাগরের কাছের এক শহরে তল্লাশি চালাচ্ছে তুরস্ক। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্ আন্তজাির্তক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, খাশোগি ইস্যুতে এরই মধ্যে সৌদি আরব ও তুরস্ক সফর করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বুধবার এ সফরের ফল নিয়ে পম্পেওর কাছে থেকে একটি প্রতিবেদনও পেয়েছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরপরই তিনি খাশোগির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। খাশোগি মারা গেছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে তেমনটাই মনে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যায় সৌদি আরবের শীষর্পযাের্য়র হাত রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন। তবে এর পেছনে কে রয়েছে, সে ব্যাপারে এখনই সুনিদির্ষ্ট সিদ্ধান্তে আসা ‘বেশ তাড়াতাড়ি’ হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অচিরেই ঘটনার অতলে পেঁৗছে যাব।’ এরআগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন খাশোগির নিখেঁাজের পেছনে সৌদি নেতারা সংশ্লিষ্ট নন। সাংবাদিক খাশোগির নিখেঁাজের পেছনে ‘দুবৃর্ত্ত ঘাতকরা’ জড়িত থাকতে পারে, গত কয়েকদিন ধরে ট্রাম্প এমন সম্ভাবনার কথাও বলে আসছেন। তাই এ ঘটনায় আগেভাগেই সৌদি আরবকে দোষারোপ করতে নারাজ তিনি। বরং ‘দোষ প্রমাণ না হতেই’ সৌদি আরবকে দোষী ঠাওরানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্তু এসব বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি ভিন্ন কথা বললেন। তার আগে তিনি হশিয়ারি দিয়েছিলেন, যদি এর সঙ্গে সৌদি সরকারের যোগসাজস থাকে, তবে তিনি কঠোর শাস্তি দেবেন। গত ২ অক্টোবর জামাল খাশোগি তার তুকির্ বাগদত্তাকে বাইরে দঁাড় করিয়ে রেখে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। সৌদি নাগরিক খাশোগি সেখানে তার প্রথম বিয়ের তালাকের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। ওই দিন বিকালে তার বাগদত্তা জানান, খাশোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর সেখান থেকে বের হননি। তুরস্কের দাবি, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যার পর তার লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে সৌদি আরব তুরস্কের দাবিকে ‘মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তুরস্ক অবশ্য এরই মধ্যে সৌদি কনস্যুলেটে তল্লাশি চালিয়েছে। দেশটির কমর্কতার্রা বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভবত ইস্তাম্বুলের কাছাকাছি কোনো বনের ভেতরে খাশোগির লাশ পুঁতে ফেলা হয়েছে। কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে অনেক নমুনা পাওয়া গেছে বলেও দাবি তুকির্ কমর্কতাের্দর। প্রাপ্ত নমুনা থেকে খাশোগির ডিএনএ উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে সৌদি সাংবাদিকের ‘দেহাবশেষের খেঁাজ পেতে’ বেলগ্রাড জঙ্গল ও ইয়ালোভা শহরের একটি স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে তুকির্ নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে। কমর্কতার্রা বলছেন, কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবন শেষে তারা তাদের তদন্ত আরও বিস্তৃত করেছেন। খাশোগির নিখেঁাজের দিন কনস্যুলেট ভবন থেকে যেসব যানবাহন বেরিয়ে গেছে সেগুলোর গন্তব্য দেখেই বেলগ্রাড জঙ্গল ও ইস্তাম্বুল থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের ইয়ালোভায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ দুটি স্থানে খাশোগির দেহাবশেষ থাকতে পারে বলেও অনুমান তাদের। কমর্কতার্রা বলছেন, খাশোগির দেহাবশেষ নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে কোনো একটি ফামর্ হাউস বা ভিলাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের। এর আগে বৃহস্পতিবার তুকির্ তদন্ত দল সৌদি যুবরাজ সালমানের সমালোচক ওয়াশিংটন পোস্টের কলানিস্ট খাশোগির খেঁাজে ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেট ভবন ও কনসালের বাসভবনে দ্বিতীয় দফা তল্লাশি চালায়। এ দুই স্থানের মাটি ও পানিসহ অসংখ্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মাকির্ন গণমাধ্যম জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নিবার্সনে থাকা খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের নিদের্শ দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজই। ‘ভুল পথে পরিচালিত’ জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিযার্তনেই খাশোগির মৃত্যু হয়, রিয়াদ তাদের দায় স্বীকারে এমনটি বলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যুবরাজের দায় মোচনের চেষ্টা চলছে।