মাদকের ব্যবসা ছিল আদ্দিকালেও গবেষণায় তেমনই ইঙ্গিত

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাচীন যুগেও মাদকের অস্তিত্ব ছিল। শিল্পীদের কাজে, প্রাচীন পুঁথিতে, পুরাণ-লোকগাথায় এতদিন আফিম কিংবা অন্যান্য মাদকের কথা মিলেছে। কিন্তু হাতেনাতে প্রমাণ মেলেনি কখনো। এবার রাসায়নিক প্রমাণ মিলল প্রাচীন মাদকের। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়কর্ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সাইপ্রাস থেকে পাওয়া ব্রোঞ্জ যুগের একটি জগে যে তৈলাক্ত তরল মিলেছিল, তা আসলে আফিম-জাত একটি উপক্ষার। এই আবিষ্কার নতুন করে ভাবিয়েছে প্রতœতাত্তি¡কদের। তাদের ধারণা, সেই সময় যে মাদকের ব্যবসা চলত, এটা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভেতরের তরলটি শুধু যে আফিম-জাত তাই নয়, পাত্রের মুখটিও আফিম ফুলের (পপি ফ্লাওয়ার) মতো। তবে যে তরলটির পরিচয় আবিষ্কৃত হলো, তা নেশা বা চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের জন্য নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এটি সম্ভবত ‘বডি অয়েল’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জগ এবং এর মধ্যে থাকা তরলটি ১৬৫০ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্ট-পূবাের্ব্দর মধ্যেকার বলে অনুমান। এমনিতেই মরফিন বা আধুনিক পেইনকিলার আসার আগে, আফিম ব্যথানাশক হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল। প্রাচীন গাথায় এর উল্লেখ এসেছে বার বার। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পযের্বক্ষক রেবেকা স্ট্যাসি বলেন, ‘এটা আমাদের মনে রাখা উচিত, এটি একটি সাধারণ পাত্র ছিল, অন্তত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর আগ পযর্ন্ত। তবে এটা স্বীকার করতেই হচ্ছে, এই জগটির ভেতরে উপাদানসহ (আফিম) বিরল ধরনের সিল করা পাত্র ছিল। আমাদের এতদিনের পযের্বক্ষণ ও গবেষণার ফলে একটা নতুন ধরনের বিশ্লেষণাত্মক কাজে সফল হওয়া গেল।’ হিপনোস (ঘুম) ও নিক্স (রাত্রি)Ñ দুই গ্রিক দেবতাকেও আফিমের বীজের সঙ্গে দেখা গেছে প্রাচীন মূতিের্ত। সাইক্লেড দ্বীপের প্রাচীন মুদ্রায় মিলেছে এই আফিম বীজের অস্তিত্বের কথা। গ্রিক পুরাণে রয়েছে, পেরসেফোনকে অপহরণের পর মা দেমেতারকে ঘুম পাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছিল আফিমের। আফিমের রস খেলে ঘুম হবে, কিন্তু বেশি খেলে কোমায় গিয়ে মৃত্যু পযর্ন্ত হতে পারে, এমনটা উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসকদের লেখায়। যেমন দিওসকরিদেস। খ্রিস্টপূবর্ চতুদর্শ শতকে ‘ফাদার অব বোটানি’ বলে পরিচিত থিওফরাস্তাস এবং চিকিৎসক থ্রাসায়াস বলেন, হেমলক ও আফিমের রস এক সঙ্গে খেলে যন্ত্রণাহীন মৃত্যুও সম্ভব! চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত ইতিহাসবিদ জন স্কারবরো বলেন, হেমলকের বিশেষ রেসিপি ছিল। কেইওস দ্বীপের বাসিন্দারা নাকি বহুদিন বঁাচতেন হেমলক বা আফিম ব্যবহার করেই। বাইবেলের ‘প্যাসেজ অব ডেথ’-এও রয়েছে প্রাণঘাতী মাদকের কথা। অল্প ওয়াইনে বিশেষ ধরনের রেজিন মিশিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে নিউ টেস্টামেন্টেও। তৃতীয় শতকে উত্তর আফ্রিকার তেরতুলিয়ানদের লেখায় মাদক ও ওয়াইনের উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন যুগে ব্যথার উপশমের জন্য ব্যবহার করা হতো মদও। তবে আফিম যে ক্ষতি করে, প্রাচীন চিকিৎসকদের অনেকের লেখায় একথাও উল্লেখ ছিল। ইয়কর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেন থমাস বলেন, ‘আমরা এ ধরনের আফিমকে শনাক্ত করার জন্য কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। বিস্তর গবেষণা এবং পযের্বক্ষণ ছিল আফিম নিণর্য় নিয়ে। সম্পূণর্ ভিন্ন ধরনের এই গবেষণাটি চালানোর জন্য সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। অবশেষে আমরা এবং আমাদের নতুন ধরনের বিশ্লেষণাত্মক গবেষণা সফল হয়েছে।’ সংবাদসূত্র : এবিপি, এমএসএন, ইনডিপেনডেন্ট