বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আফগানিস্তানে অস্থিরতা

ভয়-আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে অসহায় মানুষ

ম বলপূর্বক কাবুল দখল করলে স্বীকৃতি পাবে না তালেবান : যুক্তরাষ্ট্র 'আফগানিস্তানকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না' যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী :ইমরান খান
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
আফগানিস্তানে তালেবানের অগ্রযাত্রা -সাম্প্রতিক ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে কট্টরপন্থি গোষ্ঠী তালেবান। কয়েক মাসের মধ্যে দেশটির সীমান্ত এলাকাগুলো দখলে নেয় তারা। এরপর ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে বিভিন্ন শহর দখলের জন্য। মার্কিন প্রশাসন সেনা প্রত্যাহার শুরু করার পরপরই আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু হয় তালেবানের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। দুইপক্ষের লড়াইয়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। ভয় আর আতঙ্কে এ পর্যন্ত ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন দেড় লাখের মতো মানুষ। এতেও নিস্তার মেলেনি। আরও বহু মানুষ এখনো পালাচ্ছেন। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি

কায়সার সামা কান্দাহারের বাসিন্দা, পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন রাজধানী কাবুলে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কায়সার অভিযোগ করে বলেন, 'সম্প্রতি আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার প্রায় দখলে নিয়েছে তালেবান। ফলে সেখানে বসবাস করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ছাড়া মার্কেটে যাওয়া বিপদ। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। বলা যায়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সেখানে থমেকে গেছে।'

কান্দাহারের আরেক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা সব সময় ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আছি, কখন তালেবান তাদের বাড়িতে চলে আসে। কারণ, লড়াই একেবারে শহরের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।'

২৩ বছর বয়সি নাভিদ আমিনি বলেন, তিনি জন্মের পর থেকে কান্দাহারে বসবাস করছেন। কিন্তু এমন ভয়ানক পরিস্থিতি আর কখনো দেখেননি, কয়েক সপ্তাহ ধরে যা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, তালেবান পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শহরের চারপাশে এখন যুদ্ধ চলছে।'

কান্দাহারের চারটি জেলায় যুদ্ধ চলছে আফগান বাহিনী ও তালেবানের। তারা বেশিরভাগ ভবন দখল করে যুদ্ধ চালাচ্ছে। সংঘর্ষের সময় বেছে নেওয়া হচ্ছে বাড়ির ছাদও।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, তালেবান সরকার পক্ষের লোকজনকে জড়ো করছে আর বেছে বেছে হত্যা করছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে হত্যার বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়ার পরপরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। যদিও তালেবান এটিকে 'প্রোপাগান্ডা' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত ১৬ জুলাই আফগান-তালেবান সংঘর্ষে নিহত হন তরুণ সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। এরপর সম্প্রতি জনপ্রিয় আফগান কৌতুক অভিনেতা নজর মোহাম্মদ ওরফে খাসা জওয়ানের মৃতু্যর ভয়াবহ চিত্র ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যদিও তালেবানের দাবি, নজরের মৃতু্যতে তাদের কোনো হাত নেই। এ ঘটনার পর আতঙ্ক আরও বেড়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। শহর ছাড়তে শুরু করেন তারা।

সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, '২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে বিস্ফোরক হামলায় ৫০১ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন এক হাজার ৪৫৭ জন।' আফগান সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার সংখ্যা আরও বেড়েছে।'

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানী কাবুলের চারপাশে শরণার্থী শিবির তৈরি করা হয়েছে। কান্দাহার ও অন্যান্য তালেবান অধু্যষিত এলাকা ছেড়ে সাধারণ মানুষ এসব শরণার্থী শিবিরেই আশ্রয় নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন এসব শিবিরে।

বলপূর্বক কাবুল দখল করলে স্বীকৃতি

পাবে না তালেবান : যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে, আফগানিস্তানে তালেবান যদি জোর করে কবুল বা ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাহলে তারা কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না। বুধবার এমন মন্তব্য করেছেন ভারত সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই মন্ত্রী জানান, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার মধ্যে সমাধান খোঁজাই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ বলে দুই দেশ বিশ্বাস করে।

চলতি বছরের শুরুতে বাইডেন প্রশাসন ওয়াশিংটনে দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেনের এটিই প্রথম ভারত সফর। বুধবার সন্ধ্যায় দিলিস্ন পৌঁছানোর পর একে একে দেখা করেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। সবগুলো বৈঠকেই আলোচনার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা তথা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি।

পরে বিকালে দুই দেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তান ইসু্যতে কথা বলেন বিস্নংকেন। তিনি বলেন, 'এটা ঠিক যে, গত সপ্তাহে আমরা বেশ কয়েকটি জেলা সদরে তালেবানের অগ্রযাত্রা দেখেছি। প্রাদেশিক কয়েকটি রাজধানীও তারা কবজা করতে চাইছে। যেসব এলাকা তারা দখল করেছে, সেখানে নির্যাতন চালানোরও খবর আসছে। এগুলো সত্যিই বিচলিত করার মতো। পাশাপাশি আমি এটাও বলবো, তালেবান কিন্তু বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে। চাইছে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। কিন্তু আফগানিস্তানে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করতে গেলে বা নিজ দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করলে সে লক্ষ্য পূরণ হবে না।'

'আফগানিস্তানকে চীনের বিরুদ্ধে

ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না'

অন্যদিকে, আফগানিস্তানের মাটি চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তালেবান। বুধবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে দেশটিকে আশ্বস্ত করেন চীন সফররত তালেবান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

তালেবানের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের মাটি কোনোভাবেই চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জবাবে আফগানিস্তানের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়তার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র আফগান পরিস্থিতিকে

নাজুক করেছে : ইমরান

অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগে থেকেই খারাপ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র যথাযথই এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে রেখে গেছে। তিনি বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই খোলামেলা মন্তব্য করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে