খাশোগিকে নিয়ে সৌদি ব্যাখ্যাকে গ্রহণযোগ্য বললেন ট্রাম্প

রিয়াদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় জাতিসংঘ, রাজনীতিকসহ অনেকেই আন্তজাির্তক তদন্তের দাবি

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাংবাদিক জামাল খাশোগি
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে ‘মমার্হত’ হয়েছে। এর আগে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ঘটনা সত্যি হলে সৌদি আরবকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু সৌদি স্বীকারোক্তির পর খাশোগির মৃত্যুর কারণ নিয়ে রিয়াদের দেয়া ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট সৌদি ব্যাখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য আখ্যা দিলেও সিনেট গোয়েন্দা কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা তা মানতে নারাজ। খাশোগি হত্যাকাÐ নিয়ে দেয়া সৌদি আরবের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন রাজনীতি বিশ্লেষকরাও। জাতিসংঘ এ ঘটনায় ‘গভীর বিরক্তি’ প্রকাশ করেছে। এক ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সৌদি আরবের এই দাবি, ঘটনা তদন্তে তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঘটনার আন্তজাির্তক তদন্তের দাবি তুলেছে তারা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, এএফপি অনলাইন খাশোগির মৃত্যুর বিষয়ে সৌদি আরবের স্বীকারোক্তির প্রথম মাকির্ন প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউস মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডাসর্ জানান, ‘আমরা খাশোগির মৃত্যুর খবর শুনে মমার্হত হয়েছি এবং তার পরিবার, বাগদত্তা ও বন্ধু-বান্ধবের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তারপরও সব প্রক্রিয়া মেনে স্বচ্ছতা ও যথাসময়ে এই ঘটনার বিচারের জন্য হোয়াইট হাউস চাপ দিয়ে যাবে।’ আর স্থানীয় সময় শুক্রবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘খাশোগির মৃত্যু নিয়ে সৌদি আরবের ঘোষণা একটি ‘ভালো প্রথম পদক্ষেপ’। ওই সময় তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তার আওতায় বড় ধরনের প্রতিরক্ষা বাণিজ্য বাতিল করা হবে না। ট্রাম্প বলেন, ‘এর সঙ্গে অনেক অনেক মানুষ জড়িত আর আমার মনে হয়, এটা বিরাট পদক্ষেপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য।’ গত ২ অক্টোবর খাশোগি নিখেঁাজের পর থেকেই সৌদি আরব দাবি করে আসছিল, তিনি ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশটি স্বীকার করে, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত দুই জ্যেষ্ঠ কমর্কতাের্ক বহিষ্কারের কথাও জানায় দেশটি। এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক খাশোগির মৃত্যু সম্পকের্ নিশ্চিত হয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। খাশোগির পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দ্রæততম সময়ের মধ্যে একটি পূণার্ঙ্গ-স্বচ্ছ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের বিচার নিশ্চিতের আহŸান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প সৌদি আরবের ব্যাখ্যাকে গ্রহণযোগ্য বললেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আইন প্রণেতাই এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিন্তু এই ঘটনায় সৌদি আরবের কঠোর সমালোচনায় মুখর মাকির্ন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ‘সত্যি বলতে খাশোগিকে নিয়ে সৌদি আরবের নতুন ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমি সন্দিহান।’ ডেমোক্রেটিক সিনেটর রিচাডর্ বøুমেনথাল মাকির্ন সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে বলেছেন, সৌদি বয়ানের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি খাশোগির মৃত্যুর ঘটনায় একটি আন্তজাির্তক তদন্তের দাবি জানান। মাকির্ন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির সদস্য ও সিনিয়র ডেমোক্রেটিক সিনেটর অ্যাডাম স্কিফ শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, সকালের দিকেই তিনি ঘটনার বিস্তারিত বণর্নার একটি গোপন সংক্ষিপ্তসার পেয়েছেন। ‘নিউইয়কর্ টাইমস’কে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে স্কিফ অবশ্য কোন্ গোয়েন্দার রিপোটর্ পেয়েছেন, তার নাম প্রকাশ করেননি। তবে ওই বণর্নার সঙ্গে শনিবার সৌদি কতৃর্পক্ষের দেয়া বণর্নার সঙ্গে মিল আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৌদি বয়ান ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের আমলে জাতিসংঘে নিযুক্ত মাকির্ন রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার টুইটারে বলেন, ‘সৌদি কতৃর্পক্ষ নিরেট মিথ্যার (খাশোগি কনস্যুলেট ছেড়ে গেছেন) মুখ বদলে ভুল স্বীকারোক্তি (দুবৃর্ত্ত অভিযান) দিয়ে দাবি করছে শিয়ালই বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দেখবে মুরগির সঙ্গে কী হয়েছে।’ সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য কমর্সূচির পরিচালক জন বি অল্টারম্যান বলেন, সৌদি বিবৃতিতে বলা হয়নি, বিপদ জেনেও খাশোগি কেন শত্রæদের এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন। খাশোগিকে বিনয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আর যাদের তিনি আগে থেকেই চিনতেন, তাদের দেখে তিনি কীভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েন?’