বিশেষ প্রতিবেদন

ভেনিসকে বঁাচানোর মরিয়া চেষ্টা

শহরের অবস্থা দঁাড়িয়েছে এখন ডিজনিল্যান্ডের মতো। আমরা যদি এখনই এর একটা সমাধান বের করতে না-পারি, ভেনিস হয়ে উঠবে পেরুর মাচু পিচুর মতো ...

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পযর্টকবাহী বড় জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পযর্টন শহরগুলোর অন্যতম ইতালির ভেনিসে স্থায়ীভাবে যত বেশি মানুষ বাস করে, তার চেয়ে অনেক বেশি আসে পযর্টক। ফলে ‘আড্রিয়াটিকের রানি’ নামে পরিচিত ভেনিসের জনসংখ্যার অধেের্করও বেশি গত ৫০ বছরে এ শহর ছেড়ে অন্যখানে পাড়ি জমিয়েছে। আর যারা আজও রয়ে গেছে, তারাই এখন একটা শেষ মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ভেনিসকে পযর্টকদের কবল থেকে আবার ফিরে পাওয়া যায় কি-না, সেটা দেখার। কদিন আগেও ভেনিসের সাগরতটে ভেড়া বিশাল ক্রুজ জাহাজগুলোকে লক্ষ করে ‘আউট আউট’ বলে চেঁচাচ্ছিল আন্দোলনকারীরা। নিজেদের ছোট ছোট নৌকা নিয়ে তারা ঘিরে ধরেছিল দৈত্যাকৃতির ওই জাহাজগুলো। আন্দোলনকারীদের একজন ভেনিসেরই বাসিন্দা ম্যাত্তিও সেচ্চি। তিনি বলেন, ‘ভেনিসের অবস্থা দঁাড়িয়েছে এখন ডিজনিল্যান্ডের মতো। আমরা যদি এখনই এর একটা সমাধান বের করতে না-পারি, ভেনিস হয়ে উঠবে পেরুর মাচু পিচুর মতো। অথার্ৎ, যেখানে দারুণ সব মাবেের্লর স্থাপত্য থাকবে। কিন্তু থাকবে না কোনো জীবনের অস্তিত্ব, কোনো মানুষ সেখানে বাস করবে না। গত বছরেই ভেনিসে বেড়াতে এসেছিলেন দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ। গন্ডোলায় চেপে, রিয়ালটো ব্রিজে ছবি তুলে, পিয়াৎজা সান মাকোের্ত আইসক্রিম খেয়ে তারা হয়তো দারুণ সময় কাটিয়েছেন, কিন্তু সেই গিজগিজে ভিড়ে হিমশিম খেয়েছেন ভেনিসের বাসিন্দারা।’ ভেনিশিয়ান মারিয়ানা পিউরিসিওল বলেন, ‘শহরের বহু বাড়িই এখানে পযর্টকদের ভাড়া দেয়া হয়। আমার বয়স প্রায় ৫০ হতে চলল, আমাকেও এখানে একটা ফ্ল্যাট শেয়ার করে কাটাতে হয়। বহু স্থানীয় দোকান আপনার বেকারি, মাংসের দোকান বা দজির্র দোকান, সবই এখন বদলে গেছে স্যুভেনির শপ বা পযর্টকদের জন্য রেস্তোরঁা, ফাস্ট ফুড শপে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কোনো দোকানেই আর কিছু অবশিষ্ট নেই।’ ১৯৬৫ সালেও ভেনিসের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে এক লাখ ২২ হাজারের বেশি লোক বাস করত। আজ সেই একই শহরে থাকে ৫৪ হাজারের কম মানুষ। সাগরে দৈত্যাকার ক্রুজ জাহাজগুলোই ভেনিসের ম্যাস ট্যুরিজম বা গণপযর্টনের প্রতীক। প্রতি বছরই এই জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখানো হয়, যাতে তারা ভেনিসের হ্রদে ভিড়তে না পারে। ‘নো বিগ শিপস কমিটি’র ব্যানারে যে প্রতিবাদকারীরা ক্রুজ শিপগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাদের নেতৃস্থানীয় মাকোর্ বারাভাল্লি। তিনি বলেন, ‘এই জাহাজগুলো প্রতি বছর ভেনিসে ১৫ লাখের বেশি পযর্টক আনছে বলেই শুধু নয়, এগুলো দেখলেই যে কেউ বুঝবেÑ এই বিশাল মাপের ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের শহরের নেই। ফলে ভেনিসকে বঁাচানোর লড়াইতে এই ক্রুজ শিপগুলোই একটা প্রতীকী শত্রæ হয়ে উঠেছে।’ সান মাকোর্ স্কোয়ারে মাকির্ন পযর্টক দম্পতি বেন আর ডায়ানা বলছিলেন, এই চত্বরে একজনও ভেনিসের খঁাটি বাসিন্দা আছে বলে মনে হয় না। ডায়ানার মতে, বিষয়টা দু’দিকেই কাটা তলোয়ারের মতো, একদিকে পযর্টকদের আনা পয়সাও যেমন ভেনিসের দরকার, তেমনি রোজ এত এত বাইরের লোককে মেনে নেয়াটাও বেশ বিরক্তিকর। মারিয়ানা পিউরিসিওল বলেন, ‘আমার সবচেয়ে অদ্ভুত লাগে যখন বাইরের পযর্টকরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা ভেনিস বন্ধ হয় কত রাতে? তখন আমি বুঝতে পারি, আমাদের ভেনিসকে বাইরের লোকজন আসলে একটা জীবন্ত মিউজিয়ামের মতোই দেখে, যেখানে আমাদের ভ‚মিকা শুধু এক্সট্রার।’ ভেনিসের বাসিন্দা ও পযর্টকদের সহাবস্থান যাতে একটু মসৃণ হতে পারে, সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি শহরের মিউনিসিপ্যালিটি চালু করেছে ‘হ্যাশট্যাগ এনজয়রেসপেক্টভেনিস’ ক্যাম্পেইন। কিন্তু ভেনিসের আনন্দ উপভোগ করেও শহরটাকে কীভাবে মযার্দা দেয়া যায়, ভেনিশিয়ানরা আসলে সেই উত্তর এখনো হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ