শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আফগানিস্তানে তুমুল লড়াই

পতনের মুখে হেলমান্দের রাজধানী

'তালেবান জিতলে হুমকিতে পড়বে বৈশ্বিক নিরাপত্তা'
ম যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আফগানিস্তানে তুমুল লড়াই

পতনের মুখে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লস্করগাহ। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে হামলা চালাচ্ছে তালেবান। ফলে যেকোনো মুহূর্তে রাজধানীর দখল চলে যেতে পারে তালেবানের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান বাহিনীর বিমান হামলা সত্ত্বেও লস্করগাহের নিয়ন্ত্রণ নিতে রাজপথে তীব্র লড়াই চালাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। এরই মধ্যে একটি টিভি স্টেশন দখলের কথা জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। প্রচন্ড লড়াইয়ের কারণে আশ্রয়ের খোঁজে গ্রামের দিকে ছুটছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। সংবাদসূত্র : বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক অভিযানের কেন্দ্রে থেকেছে হেলমান্দ প্রদেশ। এটি তালেবানের দখলে গেলে তা হবে আফগান সরকারের জন্য বড় বিপর্যয়। লস্করগাহের পতন ঘটলে ২০১৬ সালের পর এটি হবে তালেবানের প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানী দখল। বর্তমানে তিনটি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিতে লড়াই চালাচ্ছে তালেবান।

আফগানিস্তানে ২০ বছরের সামরিক অভিযানের পর মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সম্প্রতি দেশটিতে দ্রম্নত তালেবানের উত্থান ঘটছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অগ্রযাত্রা ঠেকাতে যুদ্ধের মাঠে মোতায়েন করা হচ্ছে হাজার হাজার আফগান সেনা।

তালেবানরা এ পর্যন্ত ২২৩টি জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া ১১৬টি জেলায় লড়াই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম 'লং ওয়ার জার্নাল'র দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৭টির রাজধানী তালবানের দখলে চলে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে।

গত রোববার বিমানবন্দরে হামলার পর আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে তালেবান। কান্দাহার জয় করলেই তা হবে তালেবানের বড় বিজয়। এর মধ্যদিয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে তারা। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র লড়াই চলছে। গত শুক্রবার সেখানে জাতিসংঘ কার্যালয় আক্রান্ত হওয়ায় কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে সরকারি বাহিনী।

তালেবানের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে সরকারি বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবান অগ্রযাত্রার জন্য হঠাৎ করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে দায়ী করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। রোববার পার্লামেন্টে তিনি বলেন, 'আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হলো, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়েছে।'

উলেস্নখ্য, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব সেনা প্রত্যাহার করা হলেও দেশটির সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় সহায়তা দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেনা-তালেবানের সংঘর্ষে ১৫ বেসামরিক নিহত

আফগান সেনাবাহিনী এবং তালেবানের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ বেসামরিক নিহত এবং আরও ১২০ জন আহত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে আফগানিস্তানের লস্করগাহ এবং কান্দাহারে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। কয়েক দফা টুইট করে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় তালেবানের হামলা এবং আফগান ন্যাশনাল আর্মি (এএনএ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কয়েক লাখ আফগান নাগরিক বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।

এর আগে ইউএনএএমএ এক টুইট বার্তায় জানায়, গত তিন দিনে লস্করগাহ শহরে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ বেসামরিক লোক নিহত এবং আরও ৮৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে কান্দাহারে সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং ৪২ জন আহত হয়েছেন।

তালেবান জিতলে হুমকিতে পড়বে বৈশ্বিক নিরাপত্তা

এদিকে, লস্করগাহ থেকে আফগান সামরিক বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল সামি সাদাত বলেন, এখানে তালেবানের বিজয় বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তার মতে, এটা আফগানিস্তানের কোনো যুদ্ধ নয়। এটা স্বাধীনতা বনাম সর্বগ্রাসিতার মধ্যকার যুদ্ধ।

আফগানিস্তানে তালেবান ও সরকারি বাহিনীর সংঘাতকে 'স্বাধীনতা এবং সর্বগ্রাসী ক্ষমতার মধ্যে যুদ্ধ' বলে উলেস্নখ করেছেন জেনারেল সামি। তিনি বলেন, তালেবানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ফলে ছোট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আকাঙ্ক্ষা বাড়বে। তারা ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় তাদের কার্যক্রম বাড়াবে। এটা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে