খাশোগি হত্যাকাÐ

একদিনের ব্যবধানে কথা পাল্টালেন ট্রাম্প

রিয়াদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন তিনি সৌদি ব্যাখ্যাকে অপযার্প্ত আখ্যা ইউরোপের নেতাদের মরদেহ ফেরত চান স্বজনরা

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় সৌদি আরবের ভ‚মিকা নিয়ে একদিনের ব্যবধানে কথা পাল্টিয়ে শনিবার মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রিয়াদের ব্যাখ্যায় তিনি সন্তুষ্ট নন। শুক্রবার খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে সৌদি আরব তাদের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলে, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সাংবাদিক জামাল খাশোগি কনস্যুলেটে মারামারির পর নিহত হন।’ এরপর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। তবে সৌদি আরব আমাদের খুব বড় মৈত্রী। এ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার খুব গুরুত্বপূণর্ প্রাথমিক পদক্ষেপ।’ সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, আল-জাজিরা, এএফপি অনলাইন খাশোগি হত্যায় খুব দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে ট্রাম্প সৌদি আরবের প্রশংসা করে বলেন, ‘খাশোগির ঘটনায় সৌদি আরবের ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে।’ তবে শনিবার সেই তিনিই বলেন, ‘আমরা সবাই উত্তর খুঁজে পাওয়ার আগ পযর্ন্ত আমি সন্তুষ্ট নই।’ অবশ্য ট্রাম্প এদিনও বলেন, ‘সৌদি আরবের ওপর অবরোধ আরোপ করা যায়, তবে অস্ত্রচুক্তি স্থগিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অথর্নীতিতে প্রভাব ফেলবে।’ রিয়াদের সঙ্গে করা তার দেশের অস্ত্রচুক্তি বাতিলের বিষয়ে সতকর্ করে বলেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে প্রভাব পড়বে। সৌদি আরবে ১১০ বিলিয়ন (১১ হাজার কোটি) ডলারের অস্ত্র সরবরাহসহ দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এর সঙ্গে লাখ লাখ মাকিির্নর চাকরির বিষয়টি জড়িয়ে আছে। ট্রাম্পের ভাষ্য, ‘আমরা বাতিল করলেও রিয়াদ চীন কিংবা রাশিয়ার মতো কোনো দেশ থেকে ঠিকই অস্ত্র কিনে নেবে সৌদি আরব।’ ঘটনার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার কথা উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। তিনি জানান, হতে পারে যে, ক্ষমতাধর সৌদি যুবরাজ সালমান এই হত্যার ব্যাপারে কিছু জানেন না। এদিকে, খাশোগি হত্যাকাÐ প্রশ্নে সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটর শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, স্বেচ্ছায় নিবার্সনে থাকা খাশোগিকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনার জন্য সাধারণ নিদের্শনা জারি ছিল। যখন খবর আসে ২ অক্টোবর খাশোগি ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে যাবেন বিয়ের জন্য কিছু নথিপত্র নিতে, তখন সৌদি জেনারেল আসিরি ১৫ সদস্যের একটি দল পাঠান এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা করতে। সৌদি কনস্যুলেটে দেখা করতে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে খাশোগির কথাকাটাকাটি ও মারামারি হয়। আর তাতেই খাশোগির মৃত্যু হয়। তবে এই সৌদি ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন ইউরোপীয় নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন দাবি তুলেছে ঘটনার যথাযথ ও পূণার্ঙ্গ তদন্তের। সরবরাহকৃত ব্যাখ্যাকে ‘অপযার্প্ত’ আখ্যা দিয়ে জামাির্ন প্রশ্ন তুলেছে, এমন দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি যথাযথ কিনা। ফ্রান্স, কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও সরবরাহকৃত সৌদি ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে ঘটনার যথাযথ তদন্তের আহŸান জানানো হয়েছে। খাশোগির মরদেহ ফেরত চান স্বজনরা এদিকে, হত্যাকাÐের শিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগির স্বজনরা মরদেহ ফেরত দিতে সৌদি আরবের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তারা চান, এই হত্যাকাÐের নিদের্শদাতার বিচার। সৌদি আরবের ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ‘টাকির্শ-আরব মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’র প্রধান তুরান কিসলাস্কি। সৌদি আরবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জামালকে ফেরত দেন। যেন আমরা তার দাফন আর জানাজা করতে পারি। যেন সব মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারে, যেন বিশ্বনেতারা ইস্তাম্বুলে এসে তার জানাজায় অংশ নিতে পারে।’ জামাল খাশোগি হত্যাকাÐের ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার ও পঁাচজন উচ্চপদস্থ কমর্কতাের্ক বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছে সৌদি কতৃর্পক্ষ। তবে তুরান কিসলাস্কি বলেছেন, ‘আমরা জামালের জন্য সুবিচারের প্রত্যাশী। ১৮ জনের গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। যারা এই হত্যাকাÐের নিদের্শদাতা, আমরা তাদের বিচার চাই’। তুকির্ কমর্কতার্রা নাম প্রকাশ না করার শতের্ দাবি করে আসছেন, খাশোগির মরদেহ টুকরা টুকরা করে কাটা হয়েছে। সৌদি আরব দাবি করছে, খাশোগির মরদেহ তাদের কাছে নেই। সৌদি রাজদরবারের একজন ঘনিষ্ঠ সূত্রকে উদ্ধৃত করে মাকির্ন সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’ জানিয়েছে, খাশোগির মরদেহের খেঁাজ সৌদি আরবের কাছে নেই। ওই সূত্র বলেছেন, হত্যাকাÐে জড়িত স্থানীয় সহযোগীদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। সিএনএন এখনো এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে সমথর্ হয়নি।