বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্ব প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সৌদি

সাংবাদিক খাশোগি হত্যা

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগি
সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগির তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খুন হওয়া নিয়ে দীঘর্ টালবাহানার পর আন্তজাির্তক চাপের মুখে অবশেষে ধেঁায়াশাপূণর্ স্বীকারোক্তি দিয়েছে সৌদি আরব। এই মুহ‚তের্ বিশ্ব মিডিয়া খাশোগির মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও দেহাবশেষ কোথায় রাখা আছে, সে প্রশ্নে সবাই মুখর। যদিও রিয়াদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হত্যাকারী খাশোগির লাশ সরিয়ে ফেলেছে। তারা এ সম্পকের্ কিছুই জানে না। অন্যদিকে, তুকির্ পুলিশ লাশ অনুসন্ধানে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইস্তাম্বুলের উত্তরে গহীন অরণ্যে অনুসন্ধানও চালাচ্ছে। ধারণা অরণ্যের কোনোখানে তাকে পুঁতে ফেলা হয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য, রিয়াদ খাশোগির লাশ গুম করেছে। কারণ, খাশোগির লাশ ময়নাতদন্ত করলে তার ওপর অমানুষিক নিযার্তনের তথ্য বের হয়ে আসবে, যেটা সৌদির জন্য সীমাহীন বিপযের্য়র কারণ হবে। যদিও রিয়াদ বলছে, খাশোগির সঙ্গে কনস্যুলেটের ভেতরে কমর্কতাের্দর ধস্তাধস্তির একপযাের্য় খাশোগি খুন হন। আন্তজাির্তক সুনাম কুড়ানো প্রথিতযশা সাংবাদিক খাশোগির ওপর ববর্র নিযার্তনের তথ্য ফঁাস হলে সৌদি আরব আরও আন্তজাির্তক চাপে পড়বে। এরই মধ্যে সৌদির সঙ্গে অথৈর্নতিক সমৃদ্ধশালী দেশগুলোর ব্যবসায়িক সম্পকর্ গুটিয়ে ফেলার হুমকি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তুকির্ কতৃর্পক্ষ প্রথম থেকেই খাশোগির হত্যার ব্যাপারে তাদের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ থাকার কথা বলে আসছে। আর তাদের দাবি ছিল, খাশোগির হত্যার পুরো অডিও রেকডর্ আছে। যেটা প্রমাণ করে, কনস্যুলেটের ভেতর ববর্র নিযার্তন ও অতঃপর তাকে ঠাÐা মাথায় খুন করা হয়। এ কথার ভিত্তি হিসেবে তুকির্ কতৃর্পক্ষ খাশোগির হাতের স্মাটর্ ঘড়িটির উল্লেখ করে বলে, খাশোগি নিজেই তার অন্তিম মুহ‚তের্র অডিও করেছিলেন, যেটা কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমান তার বাগদত্তা হেতিসের কাছে চলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা অডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে। সৌদির এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরু থেকেই সৌদি; বিশেষ করে ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) সমথর্ন দিয়ে যাচ্ছেন এবং বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকর্ অব্যাহত থাকার বাতার্ গণমাধ্যমে প্রচার করছেন। অবশ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ সদস্যরা সৌদির সঙ্গে সম্পকর্ ছিন্ন করার পরামশর্ দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাট দল থেকেও একই সুর শোনা গেছে। কিন্তু সেসবে কণর্পাত করতে আগ্রহী নন ট্রাম্প। তিনি খাশোগি হত্যার ব্যাপারে সৌদির বিবৃতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্প সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ছাড়া সৌদির সঙ্গে সখ্য ঠিক রাখতে পারবেন না। আর সেখানে রিপাবলিক ও ডেমোক্র্যাট দলেরও অনেক সদস্য রয়েছেন, দেখা যাক কী হয়। সৌদির ‘ক্রাউন্স প্রিন্স’ মোহাম্মদ বিন সালমান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন এমন বিবৃতি থাকার পরও সৌদি বাদশাহ সেই ‘নীরব ঘাতক’ সালমানকেই তদন্তভার অপর্ণ করেছেন। অন্যদিকে কপাল পুড়েছে, সৌদির জ্যেষ্ঠ কমর্কতাের্দর। যারা গোপন নিদেের্শ এই হত্যাকাÐ ঘটিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সাংবাদিক খাশোগিকে ‘পথের কঁাটা’ হিসেবে দেখতেন যুবরাজ সালমান। তাই তিনি তাকে সরিয়ে দিতে অধৈযর্ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এখন তাকে গিলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে যুবরাজের। ২০১৭ সালে ‘ক্রাউন প্রিন্স’ হিসেবে অভিষেক হওয়া এই যুবরাজ নানা সময় বিভিন্ন বিতকির্ত ও সৌদিনীতি বিরুদ্ধ সিদ্ধান্তের কারণে আলোচনার সরব ছিলেন বিশ্বজুড়ে। সৌদির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে নিজের প্রসার ছড়িয়ে গিয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোতেও। এ ঘটনায় একদিকে যেমন ইমেজ সংকটে ভুগতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাদশাহ সালমানকে, অন্যদিকে আন্তজাির্তক চাপের মুখে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।