সাংবিধানিক সংকটে শ্রীলংকা

বিক্রমাসিংহে বরখাস্তে ভারত বিস্মিত

দিল্লিকে কোণঠাসা করতেই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী করেছে রাজাপাকসেকে!

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রনিল বিক্রমাসিংহে
সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ভারত বিস্মিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে শুক্রবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই রাজাপাকসেকে নিয়োগ দেন। এর ফলে দেশটি সাংবিধানিক সংকটে পড়ে গেছে। বিক্রমাসিংহে সবেমাত্র তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। সিরিসেনার এই উদ্যোগ শ্রীলংকার জনগণকেও বিস্মিত করেছে। এদিকে, ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পাটির্’র (ইউএনপি) প্রধান বিক্রমাসিংহে জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, পালাের্মন্টেই তার ভাগ্য নিধাির্রত হবে। তিনি বলেছেন, এখন বিষয়টি পালাের্মন্টের ওপর বতাের্লা। ভবিষ্যৎ কেবল পালাের্মন্টই নিধার্রণ করতে পারে। গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হবে। কিংবা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার কয়েক ঘণ্টা আগে সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স’ (ইউপিএফএর মধ্যে তার শ্রীলংকা ফ্রিডম পাটির্ তথা এসএলএফপি রয়েছে) ও অন্যান্য ছোট দল ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে যায়। অথচ বিক্রমাসিংহে ভারত সফর করে সেখান থেকে সমথর্ন নিয়ে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিরিসেনার এই সিদ্ধান্তে শ্রীলংকার বেশির ভাগ লোকই বিস্মিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে ভারতকে কোণঠাসা করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সিরিসেনা ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নিবার্চনের আগে বিক্রমাসিংহের ইউএনপির সঙ্গে জোট গড়েছিলেন। তিনি বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু গত ফেব্রæয়ারিতে স্থানীয় সরকার নিবার্চনে রাজাপাকসের নবগঠিত ‘শ্রীলংকা পদুজনা পেরামুনা’ (এসএলপিপি) বিপুল বিজয় লাভ করার পর সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যে বিভেদ প্রকট হয়ে পড়ে। ওই জয়ের পর জোট সরকার ত্যাগ করার জন্য সিরিসেনার ওপর প্রচÐ চাপ সৃষ্টি হয়। এসএলএফপি সদস্যরা রাজাপাকসেকে সমথর্ন করে, তারা সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সিরিসেনার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ইউপিএফএ মহাসচিব মাহিন্দা আমারাবিরা সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার জোটের ওয়াকির্ং কমিটির বৈঠকের সময় সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নতুন কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টি খুবই গোপন রাখা হয়। সরকার থেকে বের হয়ে রাজাপাকসের এসএলপিপির সঙ্গে জোট বঁাধার আগে সিরিসেনা ২৩ জন এসএলএফপি সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই বিক্রমাসিংহেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে, রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবিধানিক জটিলতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে থাকে। ২৯তম সংশোধনী (২০১৫) অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কোনো ক্ষমতা নেই প্রেসিডেন্টের। তিনি বড়জোর প্রধানমন্ত্রীকে পালাের্মন্টে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে অনুরোধ করতে পারেন। ওই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে শ্রীলংকায় সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। এখন দেশটিতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দুজনই দাবি করতে পারেন যে, তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজাপাকসেকে নিয়োগ করার পর সিরিসেনা এক সরকারি চিঠিতে বিক্রমাসিংহেকে জানান, তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এর জবাবে বিক্রমাসিংহে চিঠিতে জানান, সাংবিধানিকভাবে তাকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন। তিনি পালাের্মন্টে আস্থা ভোটের কথাও উল্লেখ করেন। এদিকে, ইউপিএফএ ও এসএলপিপির পালাের্মন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ২২৫ সদস্যের পালাের্মন্টে এই দুই দলের মোট আসন ৯৫টি। আর ইউএনপির রয়েছে ১০৬ সদস্য। পালাের্মন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩টি আসন। রাজাপাকসেকে পালাের্মন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। এসএলএফপি-এসএলপিপি তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিরিসেনা ও রাজাপাকসের মধ্যে আলোচনা হলেও তা এত দ্রæত ঘটে যাবে, কেউ তা ভাবতেই পারেনি। এখন হয়তো স্পিকার কারু জয়সুরিয়া পালাের্মন্ট অধিবেশন আহŸান করবেন। সেখানেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে সাংবিধানিক সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হবে। এদিকে, রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদশর্ন, দেশ ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইউএনপির প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর