ধারণার চেয়েও বেশি তাপ শুষছে সমুদ্র

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বের সমুদ্রগুলো যে পরিমাণ তাপ শুষে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তাতে গুরুতর গলদ আছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, ধারণার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি তাপ সমুদ্রের পানিতে মিশে আছে। জানার্ল ‘নেচারে’ প্রকাশিত নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানি নিঃসরণজনিত কারণে পৃথিবীর ঝুঁকির মাত্রাও ধারণার চেয়ে বেশি বলে উঠে এসেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি গবেষকরা বলছেন, চলতি শতকের জন্য বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার যে নিরাপদ মাত্রা নিধার্রণ করে রেখেছিলেন, সমুদ্রের এ বাড়তি তাপ শোষণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে ওই নিরাপদ মাত্রার নিচে ধরে রাখা কঠিন হবে। জলবায়ু পরিবতর্ন বিষয়ক আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) সবের্শষ পযাের্লাচনায় বলা হয়েছিল, গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে আটকে থাকা বাড়তি তাপের ৯০ শতাংশই সমুদ্র শুষে নেয়। যদিও নতুন এ গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আড়াই দশকে প্রতিবছর সমুদ্রগুলো যে পরিমাণ তাপ শোষণ করেছে, তা বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তাপের প্রায় ১৫০ গুণ। এটি আগের ধারণার চেয়েও ৬০ শতাংশ বেশি। সাধারণত মানুষের বিভিন্ন কমর্কাÐে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরিত হয়, সেগুলোর উৎপাদিত বাড়তি তাপ যোগ করেই বিশ্বের উষ্ণতা সম্পকের্ ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এ গবেষণা কেবল সমুদ্রেরই বেশি তাপ শোষণের তথ্য জানাচ্ছে না, মানুষের নিঃসরিত উষ্ণ গ্যাস যে আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি তাপ উৎপন্ন করছে, তাও বোঝাচ্ছে। একই পরিমাণ গ্যাস থেকে বেশি তাপ পাওয়ার অথর্ হচ্ছেÑ পৃথিবী কাবর্ন ডাই-অক্সাইডের কারণে ধারণা চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে। তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠা আটকাতে মানুষের কমর্কাÐজতিক কাবর্ন নিঃসরণের পরিমাণ ধারণার চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি কমাতে হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সমুদ্রের এই অধিক তাপ শোষণের কারণে সেখানকার পানি থেকে কাবর্ন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেন বেশি নিগর্ত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ভয়াবহ ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান নিউ জাসির্র প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লরে রেসপ্লেনডি। তিনি জানান, উষ্ণ সমুদ্র কম অক্সিজেন ধরে রাখে, যার প্রভাব পড়ে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানে। এরপর আছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, আপনি যদি সমুদ্রকে বেশি উষ্ণ করেন, তাহলে এর তাপস্ফীতি বাড়তে থাকবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়বে। অনেকদিন পর বায়ুমÐলের তাপমাত্রা হ্রাস পেলে সমুদ্র এ বাড়তি উষ্ণতা ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রেসপ্লেনডি বলেন, ‘সত্যিটা হচ্ছে, সমুদ্র এখন যে পরিমাণ তাপ ধরে রাখছে, তা বায়ুÐলে স্থানান্তর হলে আমাদের পক্ষে ভবিষ্যতে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটি সুনিদির্ষ্ট লক্ষ্যমাত্রার নিচে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।’ তাদের এ গবেষণার ফলে অন্য বিজ্ঞানীরাও বেশ উদ্বিগ্ন। যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটনে অবস্থিত ন্যাশনাল ওশেনগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক সিবরেন দ্রিজফৌট বলেন, গবেষকদের এ বিষয়ে বেশ সুখ্যাতি আছে, যে কারণে একে বেশ বিশ্বাসযোগ্যই মনে হচ্ছে। তাপমাত্রা এক দশমিক পঁাচ থেকে দুই ডিগ্রি পযর্ন্ত কীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সেটাই এখন উদ্বেগের বিষয়। তবে এখনি সমুদ্রের বাড়তি তাপ শোষণের বিষয়টিকে চ‚ড়ান্ত হিসেবে ধরে নিতে চান না অনেক গবেষকই। এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।