শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পরমাণু চুক্তি

ইরানের ওপর চাপ বাড়ছে

তেহরান চুক্তিতে না ফিরলে ওয়াশিংটন প্রস্তুত 'সব বিকল্প' বিবেচনা করতে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন

পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির পথে হাঁটা ইরানকে নিয়ে এবার চড়া সুরে কথা বলতে দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের। বুধবার তেহরান প্রসঙ্গে তাদের এ কঠোর অবস্থান দেখা যায়। এ দিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান যদি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সব ধরনের বিকল্পের কথাই বিবেচনা করা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স

ইসরাইল বলেছে, তেহরানকে মোকাবিলায় যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার তাদের আছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরান বিষয়ক সমন্বয়ক এনরিক মোরা বলেছেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় 'সংকটকাল চলে এসেছে'।

২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত ওই 'জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ পস্ন্যান অব অ্যাকশন' (জেসিপিওএ) চুক্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে লাগাম টানার শর্তে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন বছর আগে চুক্তিটি থেকে ওয়াশিংটনকে সরিয়ে আনেন এবং ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। পরে তেহরানও চুক্তিতে তার জন্য রাখা শর্তের লঙ্ঘন শুরু করে। চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করতে চলতি বছর ভিয়েনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হলেও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। পরোক্ষ আলোচনা ফের শুরুতে রাইসি এখন পর্যন্ত নারাজ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, 'ইরানের দিক থেকে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব বিকল্প খতিয়ে দেখছি আমরা।' ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুলস্নাহ বিন জায়েদকে সঙ্গে নিয়ে করা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন তিনি। ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে মালে ১৫ থেকে ২১ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরব যাবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বলার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ইরান বিষয়ক বিশেষ দূত রব মালে বলেছিলেন, ইরান যদি ২০১৫ সালের চুক্তিতে ফিরতে রাজি না হয়, তাহলে ওয়াশিংটন 'সব বিকল্প' বিবেচনা করতে প্রস্তুত।

একই সংবাদ সম্মেলনে লাপিদ বলেছেন, 'ইরান যদি মনে করে বিশ্ব তাদের থামানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না, আর তারা বোমা বানানোর দিকে এগিয়েই যাবে, তাহলে যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো উপায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে ইসরাইল।' উলেস্নখ্য, তেল আবিব এর আগে ইরাক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছিল। অনেক বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন যে ভাষায় ইরানকে ধমকাচ্ছে, তা মূলত রাইসি সরকার চুক্তির আলোচনায় ফিরবে কি না, ফিরলেও চুক্তিতে থাকা শর্ত মেনে চলতে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রতিফলন।

ছয় বছর আগে ইরানের সঙ্গে ওই পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বেরিয়ে যাওয়ার বছর খানেক পর থেকে তেহরান চুক্তিতে তার দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি থেকে সরে আসতে শুরু করে। চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করতে ভিয়েনায় চলতি বছরের জুনে শেষ রাউন্ড আলোচনা হয়। ইরান এরপর থেকে 'শিগগিরই ফের আলোচনায় বসছি' বলে এলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনো তারিখ বা সময়সীমা দেয়নি। পশ্চিমা এক কূটনীতিক বুধবার বলেছেন, তেহরান যদি রাজিও হয়, তবে অক্টোবরের শেষ ছাড়া আলোচনা শুরু হচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে