খাশোগিকে ‘বিপজ্জনক’ বলেছিলেন সৌদি যুবরাজ সালমান

জ্জ দেহাবশেষ পরিবারকে ফিরিয়ে দেয়ার আহŸান যুক্তরাষ্ট্রের জ্জ যুবরাজের দাতব্য সংস্থায় সহায়তা বন্ধ করছে গেটস ফাউন্ডেশন

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
খুনের পর হোয়াইট হাউসকে টেলিফোনে সৌদি যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) মোহাম্মদ বিন সালমান সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘বিপজ্জনক উগ্রবাদী’ এবং ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য’ হিসেবে বণর্না করেছিলেন। বৃহস্পতিবার মাকির্ন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ও ‘নিউইয়কর্ টাইমস’ পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে প্রবেশের পর নিখেঁাজ হন সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাশোগি। পরের দিন তুরস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দূতাবাসের ভেতরেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সৌদি ওই দাবি অস্বীকার করে। এক সপ্তাহ পর খাশোগি ইস্যুতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন যুবরাজ সালমান। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, আনাদলু ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের কাছে গত ৯ অক্টোবর করা টেলিফোনে সৌদি যুবরাজ বলেন, জামাল খাশোগি চরমপন্থি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। এ সময় তিনি সৌদি-মাকির্ন সুসম্পকর্ বজায় রাখার আহŸানও জানান। সৌদি আরব অবশ্য এই টেলিফোন আলাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। জামাল খাশোগিকে হত্যার খবর প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তজাির্তক সমালোচনা ও চাপের মুখে খুনের বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয় রিয়াদ। এরই মধ্যে এ ঘটনার যৌথ তদন্তে থাকা সৌদি আরবের সরকারি কেঁৗসুলি জানিয়েছেন, দূতাবাসে প্রবেশের পরপরই খাশোগিকে হত্যা করা হয় এবং এটি ছিল পূবর্পরিকল্পিত। তবে খাশোগিকে হত্যার পর তার লাশ কোথায় পুঁতে ফেলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সৌদি এখনো কোনো কিছু জানায়নি। এদিকে, খাশোগির পরিবার ওয়াশিংটন পোস্টে দেয়া এক বিবৃতিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তার কোনো সম্পকর্ না থাকার কথা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জামাল খাশোগি কোনো দিক দিয়েই ভয়ঙ্কর ব্যক্তি ছিলেন না। এ ধরনের দাবি খুবই উদ্ভট।’ গত কয়েক বছরে খাশোগি নিজেও কয়েকবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্যক্তিগত কিছু নথিপত্র সংগ্রহে গত ২ অক্টোবর কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর সৌদি নাগরিক খাশোগিকে আর দেখা যায়নি। তিনি নিখেঁাজ হওয়ার পর থেকেই দায়ী হিসেবে যুবরাজ সালমানের নাম বারবার এসেছে। সৌদি আরব হত্যার দায় স্বীকার করার পর অনেকে প্রায় নিশ্চিত হয়েই হত্যার নিদের্শদাতা হিসেবে সালমানের নাম নিয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়ে একদম নীরব ছিলেন যুবরাজ। বেশ কয়েকদিন পর রিয়াদে একটি আন্তজাির্তক বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রথম খাশোগিকে নিয়ে প্রথম কথা বলেন তিনি। এক প্যানেল বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘অপরাধের যে ঘটনা ঘটেছে, তা সৌদি আরবের সবার জন্যই বেদনাদায়ক। এ ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ খাশোগির হত্যাকাÐকে অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধীর সাজা হবেই। তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। সৌদি আরব ও তুরস্ক একযোগে কাজ করবে।’ উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানিবাির্সত জামাল খাশোগি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। বিশেষ করে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার পরিকল্পনার বিরোধী ছিলেন তিনি। খাশোগির দেহাবশেষ পরিবারকে ফিরিয়ে দেয়ার আহŸান যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির দেহাবশেষ খুঁজে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে রিয়াদের প্রতি আহŸান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এই আহŸান জানানো হয়। মাকির্ন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রবাটর্ পালাদিনো বলেন, যারা হত্যাকাÐ সংঘটিত করেছে, শুধু তাদেরই নয়, যারা এর পেছনে ছিল ও নিদের্শ দিয়েছে তাদেরও দায়ী করা হবে। হত্যাকাÐের বিষয়টি স্বীকার করলেও এখনো দেহাবশেষ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র। যুবরাজের দাতব্য সংস্থায় সহায়তা বন্ধ গেটস ফাউন্ডেশনের এদিকে, সৌদি আরবের একটি দাতব্য সংস্থায় প্রায় সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করতে যাচ্ছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ‘মিসক’ নামের ওই সংস্থাটি পরিচালনা করতেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গেটস ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বতর্মান পরিস্থিতি প্রভাবিত করেছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘জামাল খাশোগির অপহরণ ও হত্যাকাÐের বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। আমরা বতর্মান পরিস্থিতি গভীরভাবে পযের্বক্ষণ করছি।’ যুবরাজের ওই দাতব্য সংস্থায় ৫০ লাখ ডলার সহায়তার কথা ছিল বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের।