আসামে পঁাচ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা

জ্জ ঘটনায় তুমুল উত্তেজনা রাজ্যটিতে, ১২ ঘণ্টার বন্ধ, বিক্ষোভ পশ্চিমবঙ্গেও জ্জ সন্দেহের তীর উলফার দিকে, তবে দায় অস্বীকার সংগঠনটির

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়া জেলায় বৃহস্পতিবার রাতে বন্দুকধারীদের গুলিতে পঁাচ বাঙালি দিনমজুর নিহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার বন্?ধ পালিত হয়েছে। এ সময় আসাম প্রদেশ কংগ্রেস রাজধানী গুয়াহাটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে Ñআউটলুক ইনডিয়া
ভারতের আসাম রাজ্যের তিনসুকিয়া জেলায় গুলি চালিয়ে পঁাচ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে খেরবাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গুলিতে আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। এই হত্যাকাÐে প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহী সংগঠন ‘ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম’ (ইনডিপেনডেন্ট) তথা উলফাকে (আই) সন্দেহ করছে পুলিশ। অবশ্য, বিবৃতি দিয়ে এই হত্যাকাÐের দায় অস্বীকার করেছে উলফা (আই)। এখন পযর্ন্ত সন্দেহভাজন দু’জন উলফা নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, এনডিটিভি এদিকে, অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীদের গুলিতে পঁাচ বাঙালি দিনমজুর নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের উত্তর-পূবের্র এই রাজ্যে জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। পালিত হয়েছে বন্?ধ। আসামে বাঙালি হত্যার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষোভের ডাক দেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেহভাজনদের খেঁাজে বিভিন্ন সীমান্তে চালানো হচ্ছে সেনা অভিযান। প্রত্যক্ষদশীের্দর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, অন্তত ছয়জন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারী সামরিক পোশাক পরে দুটি দলে ভাগ হয়ে সেখানে হাজির হয়েছিল। স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ একটি দোকানের সামনে কয়েকজন বাসিন্দা গল্প করছিলেন। বেছে বেছে কয়েকজনকে ‘আলোচনা আছে’ বলে ডেকে ভ‚পেন হাজারিকা সেতুর কাছে নিয়ে যায় তারা। সবাইকে জোর করে একসঙ্গে বসানোর পরেই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান একই পরিবারের তিন সদস্যসহ পঁাচজন। হত্যাকাÐের সময় ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। এমনিতেই নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ইস্যুতে আসামে আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার আসামের তিনসুকিয়া জেলায় পঁাচ বাঙালি হত্যার শিকার হওয়ার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শুক্রবার চলে ১২ ঘণ্টার বন্ধ। রেল, সড়ক অবরোধে বিপযর্স্ত হয়ে পড়ে গোটা আসাম। সারা ভারত নমশূদ্র সমাজের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় পিকেটিংয়ের ডাক দেয়া হয়। আসামের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই টুইট করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাজ্যের সবখানে বিক্ষোভে নামে তৃণমূল কংগ্রেস। আসামে নাগরিক তালিকাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার জেরেই এই হামলা কিনাÑ সেই প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। মমতার টুইটার পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘?আসাম থেকে ভয়ঙ্কর খবর এসেছে। এই নারকীয় হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করছি। এটাই কি জাতীয় নাগরিক তালিকা করার সাম্প্রতিক উন্নয়ন??’? এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই তিনসুকিয়ার খেরবাড়ি এলাকায় পরিদশের্ন গিয়েছিলেন আসাম রাজ্য পুলিশের শীষর্ কমর্কতার্রা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার রাতেই টুইট করে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকেই আসাম-অরুণাচল এবং আসাম-মিয়ানমার সীমান্তে শুরু হয়েছে সেনা অভিযান। সবগুলো পয়েন্টে তল্লাশি চালাচ্ছে আসাম রাইফেলসের বিশেষ বাহিনী। নাগরিকত্ব প্রমাণের সময়সীমা বাড়াল সুপ্রিম কোটর্ আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন তালিকার (এনআরসি) চ‚ড়ান্ত খসড়ায় যাদের নাম ওঠেনি, তাদের দাবি ও আপত্তি লিপিবদ্ধ করার সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর পযর্ন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোটর্। একই সঙ্গে আগের ১০টি নথি ছাড়াও আরও পঁাচটি নথিকে দাবির সপক্ষে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে পেশ করার অনুমতি দিয়েছে শীষর্ আদালত। এই পঁাচটি নথি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন আসাম এনআরসি’র সমন্বয়ক প্রতীক হাজরা। তবে আদালত এই পঁাচটি নথিকে অত্যন্ত কঠোরভাবে খতিয়ে দেখার কথা বলেছে। গত ৩০ জুলাই আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইনডিয়া’ চ‚ড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা উন্মুক্ত করেন। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখকে চ‚ড়ান্ত তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করা হয়। এই তালিকায় স্থান পায়নি রাজ্যটির ৪০ লাখ সাত হাজার ৭০৭ জন বাসিন্দা। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এখন প্রশ্নের মুখে। আসামে এদের এখন সরাসরি ‘অবৈধ বিদেশি’ বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আসামে নাগরিক তালিকায় নতুন করে নাম তোলা এবং এনআরসি সংক্রান্ত আপত্তি জানানোর জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করে দেশটির সুপ্রিম কোটর্। আদালত জানায়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে পরবতীর্ ৬০ দিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে। সে অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে এ সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে বৃহস্পতিবার আপত্তি জানানোর সময়সীমা আরও বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর করেছে আদালত।