মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যম গাছ!

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নেটওয়াকের্র সিগন্যাল পাওয়ার চেষ্টা গ্রামবাসীদের
গাছের সাহায্যেই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ, শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু ঘানার একটি গ্রামের বাসিন্দাদের এখন সেই পথই বেছে নিতে হয়েছে। কারণ তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যম গ্রামের মাঝে থাকা একটি উঁচু গাছ। আঞ্চলিক রাজধানী তামালি থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম বালিসিনিয়ায় যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে, যেখানে ৫০টি পরিবার বসবাস করে। তাদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন আছে। কিন্তু এখানে ফোন কল করা বা গ্রহণ করা খুবই কঠিন। গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছরের আবুবকর আল-হাসান বলেন, মোবাইল ফোনে নেটওয়াকের্র সিগন্যাল পাওয়া এখানে খুবই কঠিন। এখানকার সব মানুষই সিগন্যালের সমস্যায় ভোগে, বিশেষ করে, যখন আপনি এখন কোনো বন্ধু বা পছন্দের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তখন সেটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। এমনকি যখন কোনো অন্তঃসত্ত¡া নারীর প্রসবকালীন ব্যথা ওঠে বা কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন এমনকি অ্যাম্বুলেন্স পেতেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। এই নেটওয়াকর্ সমস্যার একটি অভিনব সমাধান খুঁজে বের করেছে গ্রামবাসী। গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত একটি বিশাল গাছ তাদের যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে। দূর থেকে দেখে গাছটি সাধারণ একটি গাছ বলে মনে হবে, যেখানে গ্রামবাসীরা এসে সামাজিক যোগাযোগে মিলিত হয়। কিন্তু কাছাকাছি হলে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। এক সংবাদদাতা দেখতে পান, গাছটির নিচে দঁাড়িয়ে অন্তত ২০ জন ফোন করছেন বা কথা বলছেন। তাদের অনেকে গাছের ডালের সঙ্গে তাদের ফোন বেঁধে রেখেছেন, আবার কেউ গাছের মগডালে উঠে গেছেন। এই গাছটিই এখানকার মানুষের মোবাইল যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। দুপুর তিনটার দিকে মোবাইল নেটওয়াকর্ খোঁজার এই কমর্কাÐ হয়, যেখানে সময় এবং ধৈযর্ খুবই গুরুত্বপূণর্। আর তাই সব গ্রামবাসীর কাছেই এই ম্যাজিক মোবাইল গাছ অনেক কিছু। গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘গাছটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূণর্। পুরো গ্রামটি এর ওপর নিভর্রশীল। কারণ এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা মোবাইল সিগন্যাল খুঁজে পাই। যেখান থেকে আমরা ফোনকল করতে পারি। তাই আমরা গাছটিরও অনেক যতœ নেই। এই গাছটি যদি পড়ে যায়, পুরো গ্রামটি বিপযর্স্ত হয়ে পড়বে।’ একজন নারী বলেন, ‘এই গ্রামে বসে আমরা কোনো ফোনকল করতে পারি না। আমরা জানি না, কেন বারবার কল ড্রপ করে যায়। যা এই গ্রামের নারীদের জন্য বড় একটি সমস্যা। এটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে বসে আমরা ফোনে কথা বলতে পারি। রাজধানী আক্রায় টনি হাসান নামের একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাখ্যা করছিলেন, এই গাছটির মোবাইল নেটওয়াকের্র রহস্য। তিনি বলেন, সেল সাইটগুলো থেকে এ রকম জায়গা সাধারণত অনেক দূরে হয়, সুতরাং সেখানকার মানুষজন সিগন্যাল ঠিকমতো পায় না। মোবাইল সিগন্যাল লাইটের আলোর মতো কাজ করে। এর সামনে কিছু পড়লে সেটি প্রতিফলন ঘটায়। যেহেতু জায়গাটি দূরে, সেখানে যা কিছুই সামনে পড়–ক না কেন, তার প্রতিফলিত হবে। গাছ এজন্য ভালো উদাহরণ, গাছের ডালপালা এই প্রতিফলন ঘটাতে পারে। ফলে সেখানে গাছটির কারণে সিগন্যাল গভীর হচ্ছে। হয়তো আশপাশে এলাকার তুলনায় গাছটি সবচেয়ে বড় বা লম্বা, সুতরাং সেখানে এ রকম পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সরকার বলছে, তারা মোবাইল নেটওয়াকর্ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সেটি না হওয়া পযর্ন্ত আবুবকরের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছের সাহায্যেই মোবাইল নেটওয়াকের্ যুক্ত থাকতে হচ্ছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ