খাশোগি হত্যায় সৌদি জড়িত :এরদোয়ান

হত্যার নিদের্শ সরকারের উচ্চপযার্য় থেকে এসেছে, তবে বাদশাহ এতে জড়িত নন

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান
ইস্তাম্বুলে কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যায় প্রথমবারের মতো সৌদি সরকারকে দায়ী করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। মাকির্ন গণমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’ লেখা এক নিবন্ধে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা জানি, খাশোগিকে হত্যার নিদের্শ সৌদি সরকারের উচ্চপযার্য় থেকে এসেছে।’ তবে তার বিশ্বাস, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ এমন নিদের্শ দেননি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা জানি, সৌদি আরবে আটক ১৮ জনের মধ্যেই ঘাতকরা আছে। আমরা এটিও জানি, ওই খুনিরা তাদের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন করতে তুরস্কে এসেছিলেন। আর তা হলোÑ খাশোগিকে হত্যা ও তুরস্ক ত্যাগ। খাশোগিকে হত্যার এই আদেশ এসেছিল সৌদি সরকারের উচ্চপযার্য় থেকে।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানান, এক দল নিরাপত্তা কমর্কতার্র বাইরেও এই হত্যায় আরও অনেক কিছু জড়িত। তিনি এই হত্যার পেছনের কলকাঠি নাড়ানোদের পরিচয় উন্মোচনের দাবি জানান। তিনি লেখেন, ‘ন্যাটোর কোনো মৈত্রী দেশে এই ধরনের অপরাধ সংঘটনের সাহস আর কেউ দেখাবেন না। কেউ যদি এই হুশিয়ারি উপেক্ষা করার চেষ্টা করেন, তাদেরকে ভয়াবহ পরিণতি মোকাবেলা করতে হবে।’ তুকির্ প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করে বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে দায়িত্বে থাকা সৌদি কনসাল জেনারেলের বিরুদ্ধে এখন পযর্ন্ত কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি এরই মধ্যে তুরস্ক ছেড়েছেন।’ এরদোয়ান আরও অভিযোগ করেন, তুরস্ক সফর করে যাওয়া সৌদি কেঁৗসুলি তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি। এমনকি ওই কেঁৗসুলি সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিতে পারছিলেন না। তবে, এরদোয়ান সৌদি আরবের সঙ্গে বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকের্র কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না বাদশাহ সালমান এ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত। একে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতিফলন মনে করছেন না তিনি। তবে ঘটনায় সৌদি সরকারের উচ্চপযাের্য়র সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের পরিবতের্ খাশোগির পূবর্পরিকল্পিত হত্যাকাÐকে ঢেকে রাখতে সৌদি কমর্কতাের্দর প্রচেষ্টায় আমরা হতবাক ও মমার্হত।’ ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা নিবন্ধে এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই খাশোগি হত্যাকাÐের নেপথ্যে নায়কদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।’ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাÐে খুনের নিদের্শদাতা হিসেবে সামনে এসেছে দেশটির যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম। গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখেঁাজ হন খাশোগি। ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে প্রথমবারের মতো খাশোগি নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব। তবে হত্যাকাÐের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমান কিংবা অন্য কোনো ঊধ্বর্তন কমর্কতার্র সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দেশটি। অবশ্য সৌদি আরবের এমন দাবি মানছে না তুরস্কসহ আন্তজাির্তক সম্প্রদায়। তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন ইস্তাম্বুলের প্রধান কেঁৗসুলি। এরদোয়ানের এই বক্তব্য আসার আগের দিন শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইয়াসিন আক্তে বলেছিলেন, খুনের পর খাশোগির দেহ টুকরা টুকরো করার পর তা অ্যাসিডে গলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, এটাই ‘একমাত্র যৌক্তিক উপসংহার’। তুরস্কের দৈনিক সংবাদপত্র ‘হুরিয়াত’কে তিনি বলেন, যারা খাশোগিকে হত্যা করেছে তারা কোনো প্রমাণ না রাখতেই তার দেহ অ্যাসিডে গলিয়ে দিয়েছে। তুরস্কের কতৃর্পক্ষ খাশোগিকে হত্যার প্রমাণ থাকার দাবি করে এলেও তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটেই খাশোগির মরদেহ নিয়ে এমন আশঙ্কার কথা জানান এই উপদেষ্টা। আক্তে বলেন, খাশোগির দেহ টুকরা করার কারণে আরও সহজেই তা অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলা গেছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা শুধু তার দেহকে টুকরাই করেনি বরং তা বিলীনও করেছে।’ তুকির্ এই কমর্কতার্ এমন একদিনে মরদেহ নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন, যেদিন খাশোগি ‘হত্যার নিদের্শদাতাকে বিচারের মুখোমুখি’ করার দাবি তুলেছেন তার বাগদত্তা হিতেস চেঙ্গিস। গাডির্য়ান, ওয়াশিংটন পোস্টসহ পঁাচটি সংবাদপত্রে লেখা এক নিবন্ধে চেঙ্গিস এই দাবি তুলেছেন। একইদিনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাশোগিকে ‘বিপজ্জনক ইসলামপন্থী’ বলে উল্লেখ করেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করার আগেই হোয়াইট হাউসে ফোন করে যুবরাজ এ কথা বলেছিলেন বলে খবর বের হয়েছে। তবে সৌদি কতৃর্পক্ষ এই মন্তব্য করা বা হত্যাকাÐে রাজপরিবারের কারও জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সব ঘটনা উন্মোচনে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ তারা।