বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণাথীর্ কাফেলা

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে শরণাথীর্র ঢল
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাজার হাজার অভিবাসী মধ্য আমেরিকান দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, নিযার্তন, দারিদ্র্য আর রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে বঁাচতে নিজেদের দেশ গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস বা এল সালভাদর থেকে পালিয়ে এসেছেন। পুরো যাত্রাপথে পানিশূন্যতা, অপরাধী চক্রের মতো বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু অনেক অভিবাসী বলছেন, যখন তারা একসঙ্গে অনেক মানুষ মিলে ভ্রমণ করেন, তখন তারা অনেক নিরাপদ বোধ করেন। গত ১২ অক্টোবর, অপরাধপ্রবণ হন্ডুরাসের শহর সান পেড্রো সুলার ১৬০ জন মানুষের একটি দল সেখানকার বাস টামির্নালে সমবেত হন এবং বিপজ্জনক এই যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন। নিজ দেশের বেকারত্ব আর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বঁাচার জন্য একমাসের বেশি সময় ধরে তারা এর জন্য পরিকল্পনা করেছেন। এর আগের বেশিরভাগ অভিবাসী কাফেলায় (ক্যারাভান) কয়েকশ মানুষ ছিল। কিন্তু সাবেক একজন রাজনীতিক এবারের পরিকল্পনা সম্পকের্ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার পর দ্রæত তা ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৩ অক্টোবর যখন ওই ছোট গ্রæপটির যাত্রা শুরু হওয়ার কথা, তখন সেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশী এক হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়। এরপর তারা প্রতিবেশী গুয়াতেমালা অতিক্রম করে মেক্সিকোয় পেঁৗছায়, যে যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও হাজার হাজার মানুষ। বেশিরভাগ অভিবাসী বলছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র বা মেক্সিকোয় নতুন জীবন এবং উন্নত সুযোগের আশা করছেন। অন্যরা বলছেন, নিজ দেশের সহিংসতা থেকে বঁাচার জন্য তারা পালিয়ে এসেছেন এবং নতুন দেশে শরণাথীর্ হিসেবে আশ্রয় চাইবেন। যেমন হন্ডুরাসে অপরাধীচক্রের সহিংসতা, মাদকযুদ্ধ এবং দুনীির্ত বড় ধরনের সমস্যা। পুরো অঞ্চলটিতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটে। যদিও মধ্য আমেরিকান দেশগুলো থেকে অনেক দিন ধরেই অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এভাবে সংগঠিত অভিবাসী স্রোতের ব্যাপারটা একেবারেই নতুন। অনেক সময় এই অভিবাসীদের মানব পাচারকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে নিজেদের জন্য কাজ করতে বাধ্য করে। তবে এ ধরনের বিশাল গ্রæপকে নিশানা করা কঠিন। ফলে তারা অধিক নিরাপত্তা বোধ করেন। জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেন, ২২ অক্টোবরের পর থেকে এই কাফেলায় অন্তত সাত হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে। তবে গ্রæপটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ফলে অভিবাসীদের সঠিক সংখ্যা নিধার্রণ করা কঠিন। কিছু অভিবাসী এরই মধ্যে মেক্সিকোর টাপাচুলা শহরে পেঁৗছে গেছে। তবে বেশিরভাগই এখনো গুয়াতেমালা-মেক্সিকো সীমান্তে আটকে রয়েছে। এই মানব স্রোতে যারা অংশ নিয়েছে, তাদের প্রতিমুহ‚তের্ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। উষ্ণ আবহাওয়াÑ মানে তাদের সূযের্র তাপে পোড়া আর পানিশূন্যতার ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে। টানা ছয়দিন ধরে হঁাটার পর অনেকেরই অচেতন হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অভিবাসীরা সড়কের পাশে বা অস্থায়ী ঘরে ঘুমাচ্ছে, যেখানে পরিষ্কার পানি বা পয়ঃনিষ্কাষণেরও অভাব রয়েছে। খাবারের যোগানও স্বল্প। অতিক্রম করার সময় স্থানীয় লোকজন এই কনভয়কে কিছু কিছু খাবার দিচ্ছে। গুয়াতেমালা এবং মেক্সিকোর যে সীমান্তে কমর্কতার্রা অভিবাসীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, সেখানে দীঘর্সময় তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে অভিবাসীদের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। যদি নিজ দেশের সহিংসতা থেকে বঁাচার জন্য কেউ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আশ্রয় প্রাথর্না করে, তার আশ্রয়ের আবেদন শোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই নীতি পরিবতের্নর বিষয়টি নিয়ে এখন একটি মামলা চলছে, যেখানে একটি সংস্থা অভিযোগ করেছে, অভিবাসন কমর্কতার্রা অবৈধভাবে শরণাথীর্ প্রক্রিয়ার বিষয়গুলোর সময়ক্ষেপণ করছেন। নিজ দেশ ছেড়ে অভিবাসীদের এভাবে ‘অবৈধভাবে’ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে আসতে দেয়ার অভিযোগ তুলে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্য আমেরিকান কয়েকটি দেশের সমালোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের নিবার্চনী প্রচারণার সময় অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা ছিল অন্যতম প্রধান নিবার্চনী প্রতিশ্রæতি। দেখা যাক, ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি উপেক্ষা করে অদম্য অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঢুকতে পারে কিনা। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ