ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর মাকির্ন নিষেধাজ্ঞা

ট্রাম্পের ঘোষণা উড়িয়ে দিয়েছেন হাসান রুহানি, বলেছেন তেল বিক্রি চালিয়ে যাবে তেহরান অথর্নীতির সব প্রধান খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত বিশ্লেষকদের

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি
ইরানের বিরুদ্ধে এযাবতকালের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মাকির্নবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে রোববার এই ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। যুক্তরাষ্ট্রের পুনবর্হাল করা নিষেধাজ্ঞা ইরান ভাঙবে আর তেল বিক্রিও চালিয়ে যাবে বলে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন তিনি। সোমবার রাষ্ট্রীয় টিভিতে অথৈর্নতিক কমর্কতাের্দর সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বৈঠকে রুহানি এ কথা বলেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, পাসর্ টুডে, আল-জাজিরা ছয় জাতির সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালে ইরানের বিরুদ্ধে যেসব মাকির্ন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছিল, সেসবই পুনবর্হাল করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। পাশাপাশি নতুন আরও কয়েকটি সংযুক্ত করা হয়েছে। ছয় জাতি ও ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির আওতায় এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে ওই চুক্তিকে ‘ত্রæটিপূণর্’ আখ্যা দিয়ে তা থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান সাইবার হামলা, ‘ব্যালিস্টিক’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমথর্ন দেয়াসহ নানা হুমকিমূলক কমর্কাÐ চালাচ্ছে। আর এসব তৎপরতা বন্ধের জন্য ইরানের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। রোববার ‘ফক্স নিউজ’কে মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘ইরানি জনগণকে আমরা সমথর্ন করছি, এটি নিশ্চিত করতে যতেœর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের ক্ষতিকর আচরণের পরিবতর্ন নিশ্চিত করতেই আমাদের তৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে। এটাই লক্ষ্য, এটাই উদ্দেশ্য। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এটিই আমরা অজর্ন করবো।’ সোমবার হতে কাযর্কর হওয়া এসব নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময়ের চেয়ে ‘সবচেয়ে কঠোর’ বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবতীর্ নিবার্চনের এক প্রচার সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসনের নেয়া কৌশলের কারণে ইরান এরই মধ্যে চাপে পড়ে গেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নতুন করে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার শতর্ দিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে ইরানের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ওইসব শতর্। ইরানের সবোর্চ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না ইরান। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, তার দেশ তেল বিক্রি করে যাবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়... কিন্তু আমরা তেল বিক্রি করে যাব। আমরা গবের্র সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ভাঙব।’ তিনি বলেন, ‘আজ শত্রæ দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের অথর্নীতিকে টাগের্ট করেছে... নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য আমাদের জনগণ।’ বিশ্লেষকদের ধারণা, পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ইরানের তেল রপ্তানি, শিপিং ও ব্যাংক ব্যবস্থাসহ অথর্নীতির সব প্রধান খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউরোপের যে দেশগুলো এখনো ইরানের সঙ্গে করা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতি, তারা নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ইরানের ব্যবসায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে তাদের সেই চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দেশসহ আটটি দেশকে ইরানের তেল কেনার সুযোগ দিতে রাজি হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইরান থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করা দেশ চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং তুরস্ক। তেহরানে মাকির্ন ও ইসরাইলি পতাকায় আগুন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় দিবস ও মাকির্ন গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া দখলের বাষির্কী পালন করেছে ইরান। ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর তেহরানে অবস্থিত তৎকালীন মাকির্ন দূতাবাস দখলে নেয় তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্রা। দিবসটি উপলক্ষে রোববার তেহরানের মাকির্ন সাবেক দূতাবাসের সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাখো মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী ¯েøাগান। সৌদি রাজতন্ত্রের পতনের দাবিতেও ¯েøাগান দেয়া হয়েছে। পদদলিত করে আগুন দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায়। ফিলিস্তিন এবং ইয়েমেনের জনগণের প্রতিও সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা। অনেকের হাতে ছিল মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানবিরোধী প্ল্যাকাডর্। এ সময় ইরানকে হুমকি দেয়ার সাহস না করতে যুক্তরাষ্ট্রের সতকর্ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা বলে, অতীতের মতো এবারও মাকির্ন নিষেধাজ্ঞা ব্যথর্ করে দেয়া হবে। তেহরানের বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলি জাফারি। তিনি বলেন, ‘মিস্টার ট্রাম্প! ইরানকে কখনো হুমকি দেবেন না।’