মধ্যবতীর্ নিবার্চনে অগ্নিপরীক্ষায় ট্রাম্প

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিবার্চনী সমাবেশে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আজ যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মধ্যবতীর্ নিবার্চন। দিনটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষাও বটে। এই নিবার্চন ভোটারদের পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ‘জনপ্রিয়তার প্যারামিটার’ নিণের্য়র একটা সুযোগ। এবারের নিবার্চনে ট্রাম্পের অধীনে বিচারপতি পদে কাভানার নিয়োগ, অভিবাসন, অথর্নীতি এবং অভিশংসন ইস্যু গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখবে। গত দুই বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকান সরকারের আমলনামায় যদি একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যায়, তাহলে যে বিষয়গুলো নজরে আসবে, তা হলোÑ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রুখতে ২০১৫ সালে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তিতে সই করেছিলেন তৎকালীন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। যা ব্যাপক বিতকের্র জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়াও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেয়ার পরপরই ওবামা ফাউন্ডেশন কতৃর্ক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিল করে সমালোচিত হন। অতি সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকেও সরে এসেছেন তিনি। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা থেকেও গুটিয়ে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। দেশটির এজেন্সির (ইপিএ) গোড়ায় বসিয়েছেন এমন একজনকে, যিনি ইপিএ-কে অবলুপ্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সারা যুক্তরাষ্ট্রে চালু করার জন্য ‘রাইট টু ওয়াকর্’ আইন পাস হয়েছে, যার ফলে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সদস্য হওয়ার পথে বিরাট বাধার সৃষ্টি হবে এবং ইউনিয়নগুলো আরও দুবর্ল হয়ে পড়বে। এখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০০ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১০ জন ইউনিয়ন মেম্বার। জামাির্ন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম বা সুইডেনের তুলনায় যা অতি নগণ্য। অতি ধনী মাকির্নদের জন্য আরও বেশি কর কমানো হয়েছে ট্রাম্পের আমলে। যার ফলে সরকারের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য এখন বহুকাল ধরে চলা নানা জনহিতকর অথর্ তহবিল বাতিল করে দেয়ার চক্রান্ত চলেছে। যেমন, জাতিসংঘের শরণাথীর্ সংস্থায় সবচেয়ে বড় দাতা দেশটির অনুদান বন্ধের ঘোষণা ছিল ন্যক্কারজনক ঘটনা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোটের্র বিচারপতি নিয়োগে এমন এক ব্যক্তিকে ট্রাম্প সমথর্ন করেছেন, যার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই যৌন হেনস্তার অভিযোগ মাথায় নিয়েই হাসিমুখে শপথ নিয়েছিলেন কাভানা। নতুন বিচারপতি কাভানাকে ট্রাম্পের অভিবাদন বিক্ষোভকারীদের সে সময় আরও বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। অভিবাসী ও নারীদের সম্পকের্ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন সময় অনগর্ল কুরুচিকর কথাবাতার্ বলে চলেছেন। জাতিবিদ্বেষী ও বণির্বদ্বেষীরা তা উল্লাসে সমথর্ন করছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো নিবাির্চত রিপাবলিকান নেতাদের ট্রাম্প সমথর্ন করেছেন। ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট’ বা শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান চরমপন্থি ব্যক্তিরা ট্রাম্পের চারদিকে উচ্চপদস্থ সরকারি পদে বহাল হয়েছে। সীমান্তে অভিবাসী শিশুদের মা-বাবার থেকে আলাদা করে খঁাচায় পুরে রাখা হচ্ছে। অনেক সময় তাদের মা-বাবাকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এবারের মধ্যবতীর্ নিবার্চনে ৫০ রাজ্যের গভনের্রর মাঝে ৩৩ রাজ্য গভনের্রর নিবার্চনও হচ্ছে। গভনর্ররা রাজ্যে ক্ষমতাবান। বাজেট প্রণয়ন এবং রাজ্যের আইন প্রণয়নে তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। কিছু কিছু আসনে ট্রাম্পের বেশ নাজেহাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেমন, জজির্য়ার গভনর্র নিবার্চনে কৃষ্ণাঙ্গ নেত্রী স্টেসি অ্যাব্রামস জয়লাভ করলে তা হবে দেশটির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূণর্ অধ্যায়। দক্ষিণের অতি রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে, সেই দাসপ্রথার সময় থেকেই কৃষ্ণাঙ্গরা অনেক বেশি দলিত। তাই স্টেসি অ্যাব্রামস গুরুত্বপূণর্ পরিবতর্ন নিয়ে আসতে পারেন। বতর্মান সিনেটে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের ৫১ জন সদস্য রয়েছেন। আর ডেমোক্রেটদের সিনেটরের সংখ্যা ৪৭ জন। দুইজন স্বতন্ত্র সিনেটর তাদের সঙ্গে থাকায় ডেমোক্রেটদের সংখ্যা দঁাড়ায় ৪৯ জনে। এবারের মধ্যবতীর্ নিবার্চনে ৩৩টি পদে নিবার্চন হবে। তবে দুটি বিশেষ পদের নিবার্চনসহ মোট ৩৫টি সিনেট আসনে নিবার্চন হবে। এই ৩৫টি সিনেটর পদের শূন্য আসনের নিবার্চনে ২৬টি পদে সিনেটর হচ্ছেন ডেমোক্রেট দলের (দুইজন স্বতন্ত্র সিনেটরসহ)। যে প্রাগৈতিহাসিক দানবরা বহুকাল বন্ধ থাকার পর বোতল থেকে ছাড়া পেয়েছে, সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত তারা, তাদের পারবে কি যুক্তরাষ্ট্রবাসী নিজেদের ধ্বংসের হাত থেকে বঁাচাতে? নাকি দানবরা বিশ্বজুড়ে তাদের তাÐব আরও প্রসারিত করবে? আজকের নিবার্চনে সেই উত্তর দেবে। সংবাদসূত্র: এমএসএন, নিউইয়কর্ টাইমস, সিএনএন