যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবতীর্ নিবার্চন

সরকার চালাতে জটিলতায় পড়বেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্টের যেকোনো আইনি এজেন্ডা আটকে দিতে পারবেন ডেমোক্রেটরা তারপরও ট্রাম্প তার নিবার্হী এবং বিচারিক ক্ষমতা ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ পাবেন

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মধ্যবতীর্ নিবার্চনে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) নিয়ন্ত্রণ হারালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিবার্চনকে ‘দারুণ সফল’ বলে বণর্না করেছেন। নিবার্চনের ফল ঘোষণার পর টুইটার বাতার্য় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আজ রাত দারুণ সফল। সকলকে ধন্যবাদ!’ উচ্চকক্ষ সিনেটের দখল হাতে থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা থাকা। কারণ সিনেট সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছর করে। কিন্তু মেয়াদের মাঝখানে এসে প্রতিনিধি পরিষদে হেরে যাওয়াটা খুবই বড় ব্যাপার একজন প্রেসিডেন্টের জন্য। যদিও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডাসর্ জানিয়েছেন, তারা (ডেমোক্রেটিক পাটির্) নিম্নকক্ষে বিজয়ী হলেও প্রেসিডেন্ট তাদের সঙ্গেই কাজ করবেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, তখন আগের দুই বছরের সঙ্গে পরের দুই বছরের শাসনে পাথর্ক্য থাকবে অনেকখানি। কেননা তখন ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের যেকোনো পরিকল্পনায় অনুমোদন না দিয়ে সেটির বাস্তবায়ন ঠেকাতে পারবেন বা দেরি করাতে পারবেন। বিবিসির নিবার্চন বিশ্লেষক অ্যান্থনি জুরকারের মতে, প্রতিনিধি পরিশোধ থেকে প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একেকটি সিদ্ধান্ত সিনেটে যায়। ডেমোক্রেটরা যেহেতু সেই হাউসের দখল পেয়ে গেছেন, তাই তারা এখন চাইলেই একজোট হয়ে ট্রাম্পের যেকোনো আইনি এজেন্ডা আটকে দিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, হাউস থেকে নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক আইন পাস করে সেগুলো সিনেটে পাঠাতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটরদের জন্য সেসব ডেমোক্রেটিক ধঁাচের পরিকল্পনা নিয়ে ভোটাভুটি হবে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। যে সিদ্ধান্তই তারা নেবেন, সেটা নিতে হবে ডেমোক্রেটিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করেই। ভোটাভুটি না করে তাদের উপায়ও থাকবে না। প্রতিনিধি পরিষদের হাতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূণর্ রাষ্ট্রীয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ। ডেমোক্রেটরা এখন চাইলেই সেই নিয়ন্ত্রণ কাজে লাগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিবার্চনী প্রচারণার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পকর্ও জোর দিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারবেন। হয়তো তারা তদন্তের খাতিরে এই সুযোগে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আথির্ক তথ্যাবলীতে হাত দিতে পারেন, যার ফলে অবশেষে সবাই তার আয়কর রিটানর্ সম্পকের্ জানার সুযোগ পাবে। কারণ গত দুই বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র কমর্কতার্র বিরুদ্ধে দুনীির্তর অভিযোগ উঠেছে। এতদিন ডেমোক্রেটরা এসব নিয়ে গভীর তদন্তের শুধু দাবিই জানিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু এখন হাউসের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পর তারা সরাসরি গভীর তদন্ত শুরু করে দিতে পারবেন। আর তাতে এমন কিছু তথ্যও বেরিয়ে আসতে পারে, যা শেষমেশ ট্রাম্প সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেবে। অবশ্য ডেমোক্রেটিক নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘সবাইকে একত্র করে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা হবে। কারণ সব দিক থেকে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে।’ তার মতে, ‘জনগণ শান্তি চায়। তারা ফল দেখতে চায়।’ তাই ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠায় তার দল রিপাবলিকান দলের সকল কাজের বিরোধিতা করবে না বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা এরপরও অনেক বেশি গুরুত্বপূণর্। কারণ সবকিছুর পরও চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো আসে সিনেট থেকেই। সিনেটই যেকোনো ব্যক্তিকে প্রশাসন বা বিচার বিভাগে নিয়োগের ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে নিশ্চিত হিসেবে অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে দেশটির বিচার বিভাগে ৮৪ ‘কনজারভেটিভ’ বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের বিজয় নিশ্চিতের ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এই ধারা বাকি দুই বছরেও থাকবে। এছাড়া সিনেটে বিজয়ের কল্যাণে ট্রাম্প যেকোনো উচ্চপযাের্য়র কমর্কতাের্কও পদ থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দ মতো ব্যক্তিকে সেখানে বসাতে পারবেন। যেমন, হয়তো মধ্যবতীর্ নিবার্চনের পর ট্রাম্পের মনে হলো, তিনি অ্যাটনির্ জেনারেল জেফ সেশনসকে সরিয়ে দেবেন। তিনি চাইলেই তা করতে পারবেন। আর সেখানে সমথর্ন দেবে রিপাবলিকান সিনেট। অথার্ৎ, সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিবার্হী এবং বিচারিক ক্ষমতা ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিনিধি পরিষদ হাতছাড়া হওয়ায় ট্রাম্প সরকারের জটিলতা হবে অনেক বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও সত্যি, রিপাবলিকানরা যদি একজোট থাকে, সিনেটের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই বাকি দুই বছর তাদের সরকার মোটামুটি তাদের মতোই চালাতে পারবে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ, এএফপি