যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক বার্তা চীনের

তাইওয়ান নিয়ে আপস নয়

কোনো বিভ্রম বা মায়ার মধ্যে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে চীনা বাহিনী সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উও কিয়ান
তাইওয়ান নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও সতর্ক করে দিয়েছে চীন। দেশটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রেরও উচিত হবে না তাইওয়ানের মায়ায় পড়া, বা এ-সংক্রান্ত কোনো বিভ্রান্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উও কিয়ান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন। সংবাদ সম্মেলনে কিয়ান বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান ইসু্যতে প্রচুর দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র, বেশ কিছু উসকানিমূলক কাজও করেছে। এসব কাজের মধ্যে সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে দেশটির সামরিক নৌযান ও যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি।' তিনি বলেন, 'আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিশেষ করে তাইওয়ান ইসু্যতে চীন কোনো প্রকার সংবাদসূত্র : এএফপি, রয়টার্স তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে চীনের সেনাবাহিনী সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন উও কিয়ান। দুই দেশের সরকারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুগপৎভাবে চীনের সেনাবাহিনীও একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চীন নীতিগতভাবে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। আমরা একসঙ্গে কাজও করতে পারি। তবে অবশ্যই উভয়ের মধ্যকার এই সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও উভয়পক্ষের মূল স্বার্থগত বিষয়গুলোতে ঐকমত্য।' যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনের আহ্বান করেছেন। আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এই তালিকায় নেই চীনের নাম। বরং চীনকে টপকে তাইওয়ানকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বুধবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বরাবরই একচোখা। গত সোমবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য, জলবায়ু, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি, তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন ইসু্যতে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। এসব ইসু্যর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইসু্য ছিল- তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রাম, যাকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা' বলে উলেস্নখ করে আসছে চীন এবং অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন কৌশলে এই 'বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে' মদদ দিচ্ছে। বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেন, তাইওয়ানের 'বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে' মদত দেওয়া 'আগুন নিয়ে খেলা' করার মতো ব্যাপার এবং এটি অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের 'হাত পুড়বে'। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে যে যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তি রয়েছে, তাই মেনে চলতে ইচ্ছুক তার দেশ। এর বাইরে অন্য কোনো কিছুতে জড়ানোর আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের নেই। দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে তাইওয়ানকে বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানাল যুক্তরাষ্ট্র। এক সময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র তাইওয়ান আসলে পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালির পূর্বদিকে চীনের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই দ্বীপ ভূখন্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে আসা চীন। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বারবার তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শি জিনপিং বলেছেন, চীনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এই পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবেই অর্জিত হওয়া উচিত, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের ক্ষেত্রে চীনের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে বলেও সতর্ক করেছেন। এমনকি, তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে ফের যুক্ত করতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে চারদিনে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা সীমানার মধ্যে প্রায় ১৫০টি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল চীন। এরপর থেকেই অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে, চীনের কবল থেকে তাইওয়ানকে রক্ষার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে 'কৌশলগত প্রচেষ্টা' চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। এ কারণেই তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও 'তাইওয়ান রিলেশন অ্যাক্ট' নামে একটি চুক্তি অনুসারে দ্বীপটির কাছে অস্ত্র বিক্রিসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।