তালেবান প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না আফগানিস্তান

বেকারত্ব ও খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার দায় সাবেক সরকারের

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
তালেবান প্রধানমন্ত্রী মোলস্না মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ
আফগানিস্তানে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোলস্না মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ বলেছেন, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না তালেবান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানকে সহায়তারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাসান আখুন্দের একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এবং আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দোহায় বৈঠকের আগে প্রথমবার এমন ভাষণ দিলেন হাসান আখুন্দ। সংবাদসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা কাবুলের ক্ষমতা দখল এবং সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরকার গঠনের পর তালেবান প্রধানমন্ত্রীর অডিও বার্তা এটিই প্রথম। শনিবারের এই অডিও বার্তায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আর তাই আগামী সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র-তালেবানের মধ্যকার নির্ধারিত বৈঠকের আগে আফগানিস্তানের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধানের এই বক্তব্যকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রায় ৩০ মিনিটের এই অডিও বার্তায় মোলস্না মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ বলেন, 'আমরা সব দেশকে এই নিশ্চিয়তা দিচ্ছি যে, আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবো না এবং সবার সঙ্গেই আমরা ভালো সম্পর্ক চাই।' তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা সব আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাকে তাদের সাহায্য বন্ধ না করার জন্য বলছি। আমাদের ক্ষয়প্রাপ্ত জাতিকে সাহায্য করার জন্য বলছি, যাতে জনগণের সমস্যার সমাধান করা যায়।' আফগান জনগণকে উদ্দেশ করে হাসান আখুন্দ বলেন, 'আফগানিস্তানের বেকারত্ব ও খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য তালেবান দায়ী নয়। বরং দেশে বিদ্যমান সব সমস্যাই সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া দায়।' পাশতু ভাষায় দেওয়া ওই বার্তায় তিনি দাবি করেন, তালেবান তাদের প্রতিশ্রম্নতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। কাজেই জনগণের উচিত, তালেবান সরকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা। দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তালেবান সরকার জনগণের 'রিজিকের' সংস্থান করছে না। বরং রিজিক আসছে আলস্নাহর পক্ষ থেকে। আলস্নাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তালেবান প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে দেশে এতটা নিরাপত্তাহীনতা ছিল যে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হতো। কিন্তু এখন সারাদেশে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বিরাজ করছে। তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা রক্ষা করার জন্য তালেবান সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান এবং আফগানিস্তানের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠন করার লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ দেন। উলেস্নখ্য, ২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান ফের দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য, বিশ্বের কোনো দেশই এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।