শ্রীলংকায় রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভ‚ত

পালাের্মন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার একক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই, দাবি রনিল বিক্রমাসিংহের

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা পালাের্মন্ট ভেঙে দিয়ে দেশটিতে আগাম নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করায় বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভ‚ত হয়েছে। শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে জারি করা এক আদেশে তিনি আগামী ৫ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠানের নিদের্শ দেন। তিনি বলেছেন, নিবাির্চত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে নতুন পালাের্মন্টের কাযর্ক্রম। একসময়ের রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিবাির্চত করে নতুন সরকার গঠনে তিনি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, আল-জাজিরা ‘বরখাস্ত’ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বিপক্ষে সিরিসেনা সমথির্ত মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকার পালাের্মন্টে পযার্প্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যথর্ হচ্ছে, এমনটা স্পষ্ট হওয়ার পরপরই শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিক্রমাসিংহের ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পাটির্’ (ইউএনপি)। ২২৫ সদস্যের পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার একক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই বলেও দাবি করেন তারা। ক্ষমতাকেন্দ্রীক রেষারেষির এক পযাের্য় গত মাসের শেষ দিকে ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স’ ক্ষমতাসীন জোট সরকার ছেড়ে দিলে ইউএনপির বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করেন সিরিসেনা। যা দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট তীব্রতর করে তোলে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হলেও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি বিক্রমসিংহ। নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে তিনি সিরিসেনার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও হুশিয়ারি দেন। এর আগে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) সিরিসেনার প্রতিই সমথর্ন ছিল বিক্রমাসিংহের; যার ওপর ভর করে পরে পালাের্মন্ট নিবার্চনেও জোট বঁাধেন তারা। সিরিসেনা ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা রাজপাকসের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লির সঙ্গে ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার কথা অভিযোগ’ নিয়ে দুই দলের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়ে। তারপরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন সিরিসেনা। বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেন বিদ্রোহ না হয়, প্রেসিডেন্ট সেজন্য পালাের্মন্টও স্থগিত করে দিয়েছিলেন। শুক্রবারের ‘ডিক্রি’তে ওই স্থগিত পালাের্মন্টই ভেঙে দেয়া হয়। পযের্বক্ষকরা বলছেন, আন্তজাির্তক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট নতুন নিবার্চনের ডাক দিলেও তার মূল উদ্দেশ্য রাজাপাকসেকেই ফের ক্ষমতায় বসানো। পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার আগে অন্য দল থেকে এমপিদের সমথর্ন নেয়ারও সবার্ত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন হিসাব বলছে, ২২৫ সদস্যের পালাের্মন্টে বিক্রমাসিংহের প্রতি এখনো ১২০ জনের সমথর্ন আছে; রাজাপাকসে পাশে পেতে পারেন বড় জোর ১০৪ জনকে। এসব হিসাবে স্পিকারকে নিরপেক্ষ ধরা হলেও তিনি বিক্রমাসিংহকে সরিয়ে রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। নতুন নিবার্চনের তারিখ ঘোষণার আগে ইউপিএফএর মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা জানান, পালাের্মন্টে ১০৪ থেকে ১০৫ সদস্যের সমথর্ন নিশ্চিত করতে পেরেছেন তারা। বিক্রমাসিংহের পক্ষের এমপিদের কেউ কেউ তাদের সমথর্ন দেবেন বলেও সে সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই আকস্মিক এক ঘোষণায় পালাের্মন্ট বিলুপ্ত করে নতুন নিবার্চনের ঘোষণা আসে। সিরিসেনার এ পদক্ষেপের সমালোচনা এসেছে লংকান বামপন্থি ‘পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট’র (জেভিপি) কাছ থেকেও। জেভিপির সাধারণ সম্পাদক তিলভিন সিলভা বলেছেন, এই মুহ‚তের্ পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়া পুরোপুরি অবৈধ এবং সংবিধানবিরোধী। রাজনৈতিক সংকট দেশটির প্রশাসনকেও পঙ্গু করে রেখেছে বলে আগেই জানিয়েছেন উভয়পক্ষের এমপিরা। এর আগে বৃহস্পতিবার বিক্রমাসিংহ এক ভিডিও বাতার্য় সিরিসেনার একের পর এক ‘অবৈধ’ পদক্ষেপের বিরোধিতায় রাস্তায় থাকায় সমথর্কদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই এই দেশকে স্বৈরাচারের কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে দেবেন না। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনিঃশেষ সাহস নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। আপনারা মুখ খুলেছেন। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যমী চেষ্টার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’ সিরিসেনার ঘোষণার আগে শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা সংকটে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানায়। নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে ইইউ পালাের্মন্ট চালু করে দ্রæত নিবার্চন দিতেও বলে। তারা জানায়, ‘দেরি হলে তা শ্রীলংকার আন্তজাির্তক ভাবমূতির্ নষ্ট করবে এবং বিনিয়োগে ধস নামাবে।