সাংবাদিক খাশোগি হত্যার অডিও ৫ দেশের কাছে হস্তান্তর

সাত মিনিটে হত্যার কাজ শেষ যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন, তখন ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন তুবাইগি

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাংবাদিক জামাল খাশোগি
সৌদি আরবের ওপর আন্তজাির্তক চাপ অব্যাহত রাখতে জামাির্ন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের কাছে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাÐের অডিও রেকডর্ হস্তান্তর করেছে তুরস্ক। শনিবার তুকির্ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার শত বছর পূতির্ উপলক্ষে শনিবার ফ্রান্স সফরের আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিনটি দেশের কাছে খাশোগি হত্যার প্রমাণ হস্তান্তর করা হলো। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কাছে অডিও রেকডর্ হস্তান্তর করা হয়। তিনি আবারও বলেছেন, খাশোগিকে কে হত্যা করেছে, তা আগে থেকেই জানত সৌদি আরব। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টাসর্ এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা টেপগুলো দিয়েছি। আমরা সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, জামাির্ন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের কাছে এর সবগুলো দিয়েছি। তারা সবগুলো কথাবাতার্ শুনেছেন। তারা জানেন।’ গত মাসে তুরস্ক সফরকালে মাকির্ন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের পরিচালক জিনা হ্যাসপেল খাশোগি হত্যার টেপ শুনেছেন। এ ছাড়া এক সৌদি জ্যেষ্ঠ ক‚টনীতিককেও টেপ শোনানো হয়েছে। এরদোয়ান অবশ্য টেপগুলোতে কী আলোচনা রয়েছে, তা জানাননি। তবে দুটি তুকির্ সূত্র জানিয়েছে, তুরস্কের কাছে একাধিক টেপ রয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব কমর্কতার্ টেপগুলো শুনেছেন তারা ওই সময় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। টেপে যাদের কথোপকথন রেকডর্ হয়েছে, তাদের মধ্যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদের শীষর্ সহযোগী সৌদ আল-কাথানিও রয়েছে। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখেঁাজ হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। আন্তজাির্তক চাপের মুখে খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে আসছে রিয়াদ। তবে সৌদি আরবের এমন দাবি মানছে না তুরস্কসহ আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের বড় অংশ। ইউরোপীয় দেশগুলো এই ইস্যুতে রিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আন্তজাির্তক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হন। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার প্রমাণ সংবলিত অডিও রেকডর্ ও যাবতীয় তথ্য তুরস্কের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া। এর আগে এসব রেকডর্ অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এবার আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের কাছে এই রেকডির্ং হস্তান্তরের কথা জানালো দেশটি। তুকির্ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খাশোগির হাতে সবার্ধুনিক ‘অ্যাপেল ওয়াচ’ ছিল। আর এই ঘড়ির মাধ্যমে সৌদি কনস্যুলেটে তাকে নিযার্তন এবং হত্যার মুহ‚তের্র অডিও রেকডর্ তার ফোন এবং আইক্লাউডে পেঁৗছে গিয়েছিল। এই ফোন তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমাণ তার বাগদত্তার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। এখন এসব রেকডর্ তার বাগদত্তার হাত থেকে তুকির্ তদন্তকারীদের কাছে পৌঁছেছে। শুরু থেকেই খাশোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক। মাত্র সাত মিনিটে হত্যার কাজ শেষ ওই অডিও রেকডির্ং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুকির্ সূত্র দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাÐ সম্পাদিত হয়েছে। ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণসংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল-তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওই দিন সকালে আঙ্কারা পেঁৗছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় ওপরে প্রচÐ চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেয়া হয়েছিল। সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডির্ট এসেছিল। স্টাডি রুমের টেবিলের ওপর শুইয়ে খাশোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরা টুকরা করেন তুবাইগি। তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন, তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া সে সময় তিনি তার সহকমীের্দরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকডের্ তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’