শ্রীলংকায় রাজনৈতিক সংকট

রাজাপাকসের প্রতি পালাের্মন্টের অনাস্থা

ক্ষমতার রেষারেষিতে বিক্রমাসিংহে বিজয়ী হয়েছেন, এমনটা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। কারণ পরবতীর্ প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার ক্ষমতা এখনো প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতেই

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাহিন্দা রাজাপাকসে
শ্রীলংকার পালাের্মন্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা কতৃর্ক নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসে ও তার সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। বুধবার তারা এই অনাস্থা প্রকাশ করে। ফলে দেশটির রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভ‚ত হলো। নিবাির্চত প্রধানমন্ত্রীর ওপর সমথর্ন তুলে নিয়ে এককালের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাজাপাকসেকে ওই পদে বসিয়েছিলেন সিরিসেনা। তার এ পদক্ষেপ পালাের্মন্টে প্রয়োজনীয় সমথর্ন পাবে না বুঝতে পেরেই পালাের্মন্ট ভেঙে দিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি নতুন নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করে ডিক্রিও জারি করেছিলেন তিনি। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টাসর্ পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার যে আদেশ দেন সিরিসেনা, বিরোধী ১০টি রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে গেলে প্রেসিডেন্টের বিপরীতে অবস্থান নেয় দেশটির সুপ্রিম কোটর্। সুপ্রিম কোটের্র প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার পালাের্মন্ট ভেঙে দেয়ার আদেশ বাতিল করে দেয়। সেইসঙ্গে নিবার্চন স্থগিতেরও আদেশ দেয়। পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে অবৈধ জানিয়ে পালাের্মন্ট পুনবর্হালের আদেশ দেয় আদালত। দুই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কাকে নিবার্চন করা হবে, এ বিষয়ে পালাের্মন্টে ভোটের ব্যবস্থা করতে বলে আদালত। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিন আদালত এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। রায় ঘোষণার পর বিক্রমসিংহের সমথর্করা বাজি পুড়িয়ে উল্লাস করে। পরে এক টুইটে বিক্রমসিংহে বলেন, ‘জনগণ তাদের প্রথম জয় পেয়েছে। সামনে অগ্রসর হন এবং আমাদের প্রিয় দেশের জনগণের সাবের্ভৗমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন।’ এরপরই বুধবার পালাের্মন্ট বসে। এদিন বেশ হট্টগোলের মধ্যে মাহিন্দা রাজাপাকসে (৭২) ও তার এমপি পুত্র নামাল রাজাপাকসে পালাের্মন্টের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এর অল্প কিছু পরেই ভোটের আহŸান জানান স্পিকার। তখন রাজাপাকসের দলের এমপিরা পালাের্মন্টের ধাতব প্রতীক অঁাকড়ে ধরে ভোটাভুটিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে স্পিকার এই অবস্থার মধ্যেই ভোট চালিয়ে যান। ওই সময় রাজাপাকসের মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য পালাের্মন্ট কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। তারা অভিযোগ করেন, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন গুরুত্বপূণর্ একটি ভোটের আয়োজন করে স্পিকার পালাের্মন্টের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন। এরপর পালাের্মন্ট নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে। পালাের্মন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া রুল জারি করে বলেন, ২২৫ জন সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য রাজাপাকসের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ জ্ঞাপন করেছেন। স্পিকার জয়সুরিয়া বলেন, ‘আমি ঘোষণা দিচ্ছি, রাজাপাকসের সরকারের ওপর এই পালাের্মন্টের আস্থা নেই।’ তবে এর মাধ্যমে পালাের্মন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনধারী দল ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পাটির্’র (ইউএনপি) প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহেই ক্ষমতার রেষারেষিতে বিজয়ী হয়েছেন, এমনটা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। কারণ পরবতীর্ প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার ক্ষমতা এখনো প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতেই আছে। গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা রাজপাকসের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মইথ্রিপালা সিরিসেনা। পরে রাজাপাকসের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে তার বিরুদ্ধেই প্রেসিডেন্ট নিবার্চনে দঁাড়ান এই ইউপিএফএ নেতা। সে সময় তাকে সমথর্ন দেন বিক্রমাসিংহে; পরে পালাের্মন্ট নিবার্চনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অজর্ন করে ইউএনপি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লির সঙ্গে ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ’ নিয়ে দুই দলের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়ে। তারপরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। ক্ষমতাকেন্দ্রীক রেষারেষির এক পযাের্য় গত ২৬ অক্টোবর সিরিসেনার ইউপিএফএ ক্ষমতাসীন জোট সরকার ছেড়ে দিলে বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট। যা দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্রতর করে তোলে। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হলেও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি দেশটির ক্ষমতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘টেম্পল ট্রিজ’ ছেড়ে যেতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। আর নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে সিরিসেনার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার আদালতে গেলে শেষ পযর্ন্ত তার পক্ষেই রায় আসে। শ্রীলংকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে, পালাের্মন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারেন না। আর পালাের্মন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো আপাতদৃষ্টিতে কঠিন। কারণ, সিরিসেনার দল ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স’ (ইউপিএফএ) ও রাজাপাকসের দল ‘শ্রীলংকা ফ্রিডম পাটির্’র মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসনসংখ্যা ১০৬। উল্লেখ্য, পালাের্মন্ট না ভেঙে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিবার্চন করতে শ্রীলংকাকে চাপ দিয়েছিল জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীনের মদদেই এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সিরিসেনা, এমনটাই ধারণা তাদের। কারণ, রাজাপাকসে সরকারকে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ স্বীকৃতি না দিলেও আগ বাড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল বেইজিং।