শ্রীলংকার পালাের্মন্টে এবার ‘লঙ্কাকাÐ’

জ্জ মারামারিতে জড়ালেন রাজাপাকসে ও বিক্রমাসিংহের অনুগত এমপিরা, একজন হাসপাতালে জ্জ স্পিকারের দিকে ‘পেপার ওয়েট’ ও পানির বোতল নিক্ষেপ জ্জ রাজাপাকসের অনাস্থা মেনে নেননি প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অধিবেশন কক্ষে এমপিদের মারামারি
শ্রীলংকার পালাের্মন্টের ভেতরে এবার মারামারি করেছেন শ্রীলংকার এমপিরা। আহত এক এমপিকে হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছে। রনিল বিক্রমসিংহের এমপিদের সঙ্গে মাহিন্দা রাজাপাকসের সমথর্ক এমপিরা এই মারামারিতে লিপ্ত হন। বৃহস্পতিবার সকালে এই ‘লঙ্কাকাÐ’ ঘটেছে। বুধবার পালাের্মন্টে নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে ও তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার স্পিকার কারু জয়সুরিয়া পালাের্মন্টে জানান, শ্রীলংকায় এখন কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিপরিষদ নেই। সংবাদসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, এনডিটিভি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, স্পিকারের এ ঘোষণার পর রাজাপাকসের অনুগত এমপিদের সঙ্গে বিক্রমাসিংহের অনুগত এমপিদের প্রথমে ধাক্কাধাক্কি ও পরে মারামারি বেধে যায়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে ঘুষিও মারতে দেখা গেছে। এক পযাের্য় স্পিকারকে লক্ষ্য করে এক এমপি কাগজ চাপা দেয়ার পাথর (পেপার ওয়েট) ছুড়ে মারেন। অনেকে স্পিকারের দিকে পানির বোতলও ছুড়ে মারেন। এ সময় কয়েকজন মেঝেতে পড়ে গেলে বিরোধীরা তাদের লাথি মারেন। স্পিকারের মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে রাজাপাকসের অনুগত এমপি আনুগামী আহত হন। এ সময় প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার বরখাস্ত করা প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের দলের এমপিরা স্পিকারকে ঘিরে রেখেছিলেন। তারপরও মারামারি চলতে থাকলে স্পিকার, রাজাপাকসে ও বিক্রমাসিংহে পালাের্মন্ট ছেড়ে চলে যান। বিক্রমাসিংহের দল ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পাটির্’র এমপি হষর্ ডি সিলভা এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটা ছিল পালাের্মন্টের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক দিন।’ মারামারির আগে রাজাপাকসে পালাের্মন্টে দেয়া ভাষণে স্পিকারের এই পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সাধারণ নিবার্চনের প্রস্তাব সমথর্ন করতে এমপিদের প্রতি আহŸান জানান। এরপরই তার সমথর্ক এমপিরা প্রতিদ্ব›দ্বী দলের এমপিদের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হন। শ্রীলংকার এই রাজনৈতিক সংকটের শুরু হয় গত ২৬ অক্টোবর। ওই দিন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহেকে বরখাস্ত করে রাজাপাকসেকে স্থলাভিষিক্ত করেন। পরদিনই পালাের্মন্ট অধিবেশন স্থগিত করেন। আন্তজাির্তক চাপের মুখের গত সোমবার পালাের্মন্টের অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু যখন প্রতীয়মান হয়, রাজাপাকসে পালাের্মন্টে অনাস্থা ভোটে জয়ী হতে পারবেন না, তখন সিরিসেনা পালাের্মন্ট ভেঙে দেন এবং আগাম নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করেন। কিন্তু বিরোধীরা আদালতে গেলে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোটর্ প্রেসিডেন্টের ওই আদেশ স্থগিত করে। এরপর বুধবার পালাের্মন্ট অধিবেশন বসে। সেখানে ২২৫ সদস্যের মধ্যে ১২২ জন রাজাপাকসে ও তার সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সমথর্ন জানায়। এদিকে, পালাের্মন্ট এমন অবস্থান নিলেও তা মেনে নেননি প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। স্পিকার কারু জয়সুরিয়ার কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, স্পিকার পালাের্মন্টের নিয়মনীতি, ঐতিহ্য ও সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন বলে মনে হওয়ায় তিনি বুধবারের অনাস্থা ভোটের ফল গ্রহণ করতে পারছেন না। শ্রীলংকার সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর। সেখানে প্রধানমন্ত্রী পালাের্মন্টের নেতৃত্বে থাকলেও নিবার্হী ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে। মন্ত্রিসভাও তার অধীনেই পরিচালিত হয়। তবে দেশটির সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে, পালাের্মন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারেন না। আর পালাের্মন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো আপাতদৃষ্টিতে কঠিন। কারণ, সিরিসেনার দল ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স’ (ইউপিএফএ) ও রাজাপাকসের দল ‘শ্রীলংকা ফ্রিডম পাটির্’র মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসনসংখ্যা ১০৬।