গণহত্যার দায়ে আজীবন কারাদÐ দুই খেমার রুজ নেতার

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দুই খেমার রুজ নেতা খিউ সাম্ফান ও নুওন চে
গণহত্যার দায়ে কম্বোডিয়ার দুই শীষর্ খেমার রুজ নেতাকে শুক্রবার আমৃত্যু কারাদÐ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সমথির্ত কোনো ‘ট্রাইব্যুনাল’ গণহত্যার অভিযোগে এই প্রথম তাদের দোষী সাব্যস্ত করে। দোষী সাব্যস্ত দুজন হলেন দেশটির মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের ডেপুটি নুওন চে (৯২) এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান (৮৭)। এই ট্রাইব্যুনালে এখন পযর্ন্ত মাত্র তিনজন খেমার রুজ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যজন হলেন, কমরেড ডাচ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, এএফপি অনলাইন পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা তৎকালীন কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পযর্ন্ত খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় ২০ লাখ মানুষ নিযার্তন ও অনাহারে মারা যান এবং কাউকে কাউকে দেশের শত্রæ আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদÐ দেয়া হয়। কম্বোডিয়ার মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন শুক্রবার গণহত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এই দুই খেমার রুজ নেতা। চার বছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রæ অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কমর্কতার্ ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। নুওন চে খেমার রুজ সরকারের আদশির্ক বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। আর খিউ সাম্ফানকে সামনে রেখেই এসবকিছু বাস্তবায়ন করা হতো। কম্বোডিয়ায় ‘ইয়ার জিরো’ নামে একটি নতুন আদশির্ভত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন পল পট ও খেমার রুজ গেরিলারা। তাতে সভ্যতা আবার নতুন করে শুরু হবে। আগের সমাজের সব মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নতুন এক সংস্কৃতি দিয়ে শুরু হবে কম্বোডিয়াÑ এই ছিল তাদের আদশের্র মূল কথা। আর এই আদশর্ বাস্তবায়নের পথে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে টাগের্ট হয়ে দঁাড়ান বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষকরা। শুক্রবার ‘দি এক্সট্রাঅডির্নারি চেম্বারস ইন দ্য কোটর্স অব কম্বোডিয়া’ (ইসিসিসি) জানায়, খেমার রুজ ‘ব্রাদার নাম্বার টু’ নুওন চে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট খিউ সাম্ফানকে চাম মুসলমান এবং ভিয়েনামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। গণহত্যার পাশাপাশি জোরপূবর্ক বিয়ে, ধষর্ণ ও সাম্প্রদায়িক নিযার্তনের অভিযোগেও তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পল পটের ডেপুটি নুওন চে কম্বোডিয়ার মানুষের কাছে ‘ব্রাদার টু’ নামে পরিচিত ছিলেন। পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান। এই রায় খেমার রুজ শাসকদের আন্তজাির্তক আইন লঙ্ঘন করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। ২০১১ সালে কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খেমার রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল খেমার রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। নুওন চে এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই বিচার দেখার জন্য খেমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীঘির্দন অপেক্ষা করতে হয়েছে।