আবারও কৌশলগত অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া

ইস্পাতের দেয়ালের মতো সুরক্ষা দেবে :কিম বড় কোনো মারণাস্ত্র না হয়ে সাধারণ অস্ত্র হতে পারে :মন্তব্য দক্ষিণ কোরিয়ার

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কিম জং-উন
নিরস্ত্রীকরণ কমর্সূচি চলছে, তারই মাঝে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার একটি ‘হাই টেক ট্যাকটিক্যাল’ (কৌশলগত) অস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। তবে ঠিক কী সেই অস্ত্র, তা খোলসা করে জানানো হয়নি দেশটির পক্ষ থেকে। দেশটির শীষর্ নেতা কিম জং-উন অস্ত্র কারখানা পরিদশর্নও করেছেন বলে শুক্রবার সরকারি বাতার্ সংস্থা ‘কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি’ (কেসিএনএ) জানিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, এএফপি অনলাইন সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলতেই এই পরীক্ষা বলে উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কেসিএনএ জানিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রটি বহুদিন ধরেই পরীক্ষামূলক অবস্থায় ছিল। এদিন চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা করা হয়, যা সফল হয়েছে। তবে এই পরীক্ষার সঠিক স্থান কোনটি ছিল, তাও জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, কিমের তত্ত¡াবধানে পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে। আর এটি উত্তর কোরিয়াকে ‘ইস্পাতের দেয়ালের মতো সুরক্ষা দেবে’ বলে জানিয়েছে কেসিএনএ। অস্ত্র কারখানা পরিদশর্নকালে উন বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর দলের দৃষ্টি দেয়ার যথাথর্তাই হচ্ছে আজকের এই ফল, যা পুরো অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দ্রæত বৃদ্ধির আরেকটি প্রদশর্নী এবং সামরিক বাহিনীর লড়াই সক্ষমতার যুগান্তকারী পরিবতর্ন।’ এক বছর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে হোয়াসং-১৫ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সময় এর উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে ছিলেন কিম। এরপর এটাই তার কোনো অস্ত্র পরিদশের্নর আনুষ্ঠানিক খবর বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর নতুন এ ‘অত্যাধুনিক অস্ত্র’ ক্ষেপণাস্ত্র বা বড় কোনো মারণাস্ত্র না হয়ে সাধারণ কোনো অস্ত্র হতে পারে বলেও ধারণা তাদের। ক্ষেপণাস্ত্রের বেলায় উত্তর কোরিয়া সাধারণত ‘কৌশলগত অস্ত্র’ পরিভাষাটি ব্যবহার করে। তবে এবার কেসিএনএ’র ভাষ্যে তা ছিল না বলে জানিয়েছে, দক্ষিণের পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রণালয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির হাত বাড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া, অন্যদিকে এই অস্ত্র পরীক্ষা দুই দেশের সম্পকের্ প্রভাব ফেলতে পারে। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছিল দুই দেশের সীমান্তবতীর্ গ্রাম পানমুনজম থেকে অস্ত্র ও মাটিতে পেঁাতা ল্যান্ডমাইন সরিয়ে নেয়া হবে। সেই চুক্তিতে সীমান্ত থেকে ল্যান্ডমাইন সরানোর কাজ শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন দক্ষিণের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিওয়ং কেয়ং ডো। তিনি জানিয়েছিলেন, সীমান্ত থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার কমর্কতাের্দর সামনে রেখে মোট ৬৩৬টি মাইন তুলে ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। সেপ্টেম্বর মাসে এই মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু হয়েছে। এরআগে, পিয়ংইয়ং গোপনে অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ঘঁাটির কাজ চালাচ্ছে বলেও চলতি মাসে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’র (সিএসআইএস) অভিযোগ করেছে। ওই গোপন ঘঁাটিগুলোর মধ্যে ১৩টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের। অবশ্য সিউল ও ওয়াশিংটন জানিয়েছে, তারা ওই ঘঁাটিগুলোর বিষয়ে আগে থেকেই জ্ঞাত। এগুলোকে ট্রাম্প-কিম চুক্তির বরখেলাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে না বলেও ইঙ্গিত তাদের। গত জুনে সিঙ্গাপুরে কিম জং-উনের সঙ্গে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বৈঠক হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কমর্সূচি বন্ধ এবং পুরোনো শত্রæতা অবসানের একটি ভিত্তিভ‚মি ছিল ওই বৈঠকটি। পরমাণু কমর্সূচি বন্ধে আরও আলোচনার জন্য আগামী বছরের প্রথম দিকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক হওয়ার কথা। তবে নতুন করে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র উৎপাদনের এই খবর দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার এ অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেই উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা ও ‘ব্যালিস্টিক’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ কমর্সূচি স্থগিত করেছিল। গত ফেব্রæয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক থেকেই দুই কোরিয়ার সম্পকের্ উষ্ণতা ফিরতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় জুনে সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক বৈঠকে ট্রাম্প ও কিম কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করারও ঘোষণা দেন। সিঙ্গাপুরের বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়া তাদের একটি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র ও রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর থেকে অথৈর্নতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে এ ধরনের আরও কেন্দ্র ভেঙে ফেলারও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। কিন্তু জুনের ওই ঐতিহাসিক বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়া ও তাদের নেতাকে নিয়ে মাকির্ন কমর্কতাের্দর প্রশংসা শোনা গেলেও ওয়াশিংটন আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো বহালই রেখেছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে আলোচনায় স্থবিরতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি শীষর্ বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে একটি বৈঠকের পরিকল্পনা থাকলেও সেটি হয়নি। অবশ্য, মাকির্ন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছর উত্তর কোরিয়ার শীষর্ নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন। আর উনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার এই বৈঠকে অস্ত্র কমর্সূচি বন্ধের প্রতিশ্রæতি ভঙ্গের কোনো সুযোগ দেবেন না তিনি। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।