সিআইএর মূল্যায়ন

সৌদি যুবরাজই খাশোগিকে হত্যার নিদের্শ দেন

জড়িত সালমানের ভাই খালিদও হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটন সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র একে ‘অতিরঞ্জিত’ বলেছেন

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি
তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা সৌদি আরবের যুবরাজ ও ‘কাযর্ত’ শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানের নিদেের্শই হয়েছে বলে এক গোপন প্রতিবেদনে জানিয়েছে মাকির্ন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’। গোয়েন্দা সংস্থার এই তথ্য ‘যুবরাজ খাশোগি হত্যাকাÐে জড়িত নয়’, সৌদি আরবের এমন দাবির সম্পূণর্ বিপরীত। প্রতিবেদনে, খাশোগি হত্যাকাÐে সালমানের সংশ্লিষ্টতাকে সবচেয়ে যুক্তিসম্পন্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সহযোগী হিসেবে যুবরাজ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের নামও বলা হয়েছে; যিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে আছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন মাকির্ন প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ প্রথমে জামাল খাশোগি হত্যায় সিআইএর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কমর্কতার্রা সিআইএর মূল্যায়নে উচ্চ আস্থা প্রকাশ করেছেন। জামাল খাশোগি হত্যায় মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) জড়িত থাকার সপক্ষে এটিই এখন পযর্ন্ত সবচেয়ে জোরালো প্রতিবেদন। এর ফলে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পকর্ স্বাভাবিক রাখতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা জটিল হয়ে গেল। খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ জড়িতের সিআইএর প্রতিবেদন প্রকাশকালে ওয়াশিংটন পোস্ট ও সংবাদ সংস্থা আসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সিআইএ কমর্কতাের্দর নাম প্রকাশ করেনি। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের ব্যাপারে হোয়াইট হাউস এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ‘বিষয়টি গোয়েন্দা সম্পকির্ত’ জানিয়ে তারা এড়িয়ে গেছে। মাকির্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএও এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সিআইএর মূল্যায়নকে ‘অতিরঞ্জিত’ দাবি করে ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অতিরঞ্জিত এই মূল্যায়নে যে দাবি করা হচ্ছে, তা মিথ্যা।’ ওয়াশিংটনের পোস্টে বলা হয়, সিআইএ খাশোগি হত্যাকাÐে যেসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম যুবরাজ সালমান ও তার ছোট ভাই খালিদের ফোনালাপ। খালিদ ফোন করে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে গিয়ে খাশোগিকে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলেন এবং নিভর্য় দেন তার কোনো ক্ষতি হবে না। এরপর কনস্যুলেটের ভেতরে গিয়ে নিখেঁাজ হন খাশোগি। তার নিখেঁাজ রহস্য নিয়ে ?নানা জল্পনা-কল্পনা এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পর কনস্যুলেট ভবনের ভেতর তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি সরকার। সিআইএ এই হত্যাকাÐ তদন্তের জন্য আরও আরেকটি ফোনালাপ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। খাশোগিকে হত্যার পর সৌদি প্রশাসনের উচ্চপযাের্য় ফোন করে বলা হয়, ‘বসকে বলো খাশোগিকে হত্যার মিশন সম্পন্ন হয়েছে।’ উল্লেখ্য, সৌদি রাজপরিবারের একসময়ের ঘনিষ্ঠজন খাশোগি তার শেষ কয়েকটি কলামে দেশটির রাজতন্ত্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে সৌদি সমাজ সংস্কারে যুবরাজ মোহাম্মদের গ্রহণ করা বেশ কিছু উদ্যোগের ‘প্রকৃত কারণ’ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। এদিকে, রিয়াদ থেকে খাশোগিকে দেশে ফেরার জন্য বরাবরই চাপ দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি দেশে ফিরতে রাজি ছিলেন না। অভিযোগ আছে, মুখ বন্ধ করতেই সৌদি যুবরাজের নিদেের্শই খাশোগিকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে রিয়াদের দাবি, খাশোগিকে দেশে ফেরাতে জোরাজুরি করার একপযাের্য় ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে শ্বাসরোধ হয়ে ?তার মৃত্যু হয়। যদিও খাশোগির মৃতদেহ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি, এ বিষয়ে সৌদি আরবও কিছু বলছে না। পরে তুরস্ক দাবি করে কনস্যুলেটের ভেতর খাশোগিকে হত্যা করার পর তার দেহ টুকরা টুকরা করা হয়। এরপর খÐিত শরীর অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলে নদর্মায় (ড্রেন) ফেলে দেয়া হয়। তুরস্ক এ হত্যাকাÐকে ইচ্ছাকৃত দাবি করে সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছে। পাশাপাশি এ হত্যাকাÐের পেছনে থাকা ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তজাির্তক বিশ্বকে সৌদি আরবের ওপর চাপ বাড়ানোর পরামশর্ও দিচ্ছে। এদিকে, রিয়াদ দাবি করেছে, খাশোগি হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮ সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পঁাচজনের বিরুদ্ধে নরহত্যার ?অভিযোগ এনে মৃত্যুদÐ দাবি করেছেন বলে গত বৃহস্পতিবার জানান, সৌদি ‘পাবলিক প্রসিকিউটর’।