অক্সফামের প্রতিবেদন

করোনাকালে সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর

প্রতিদিন তাদের সম্পদ বেড়েছে গড়ে ১৩০ কোটি ডলার করে

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে যখন বিপর্যয়কর অবস্থায়, তখন ঠিকই নিজেদের সম্পদ বাড়িয়ে নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী। তবে এই সময় দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। সোমবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম'র সম্মেলন শুরুর আগে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা 'অক্সফাম' এক প্রতিবেদনে একথা জানায়। সংবাদসূত্র : এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স সুইজারল্যান্ডের নৈসর্গিক 'স্কি রিসোর্ট' দাভোসে ফি-বছর আয়োজিত সভায় সাধারণত কয়েক হাজার রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রতিনিধি, বিনোদন জগতের তারকা, প্রচারকর্মী, অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে আলোচনা, পান পর্ব ও মতবিনিময়ে অংশ নেন। তবে করোনা মহামারির কারণে গতবারের মতো এবারও এই সভা অনলাইনে হচ্ছে। শুরুতে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি ছড়িয়ে পড়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। এবারের আলোচ্যসূচির মধ্যে আছে মহামারি নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা, টিকা পাওয়ার সমতা ও জ্বালানি পরিবর্তন। অক্সফাম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী তাদের সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছেন। তাদের সম্পদ ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তাদের সম্পদ বেড়েছে ১৩০ কোটি ডলার করে। সংস্থাটি জানায়, মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাসী মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু করোনাকালে শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদ যে হারে বেড়েছে, গত বছরে ১৪ বছরে কখনো তেমনটা আর হয়নি। প্রতিবেদনে উলেস্নখ রয়েছে, আচমকা নয়, খুব সুনির্দিষ্টভাবে এই বৈষম্য ঘটেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের সময় সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাবানদের জন্য কাঠামোগত নীতি বাছাই করা হয়। গরিব মানুষ, নারী, জাতিগত বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীরা এর ভুক্তভোগী। বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অসমতার কারণে স্বাস্থ্যসেবায় সংকট দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষুধা, লিঙ্গ বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী ২১ হাজার মানুষের মৃতু্য হচ্ছে। এছাড়াও মহামারির কারণে ১৬ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। একই সঙ্গে অসমতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অশ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষ ও নারীরা। অক্সফামের প্রধান নির্বাহী ড্যানি শ্রীস্কন্দরাজাহ বলেন, 'চলতি বছর, যেটা ঘটছে, তা হিসাবের বাইরে। এই মহামারি চলার সময় প্রায় প্রতিদিন একজন করে নতুন শত কোটিপতি তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে লকডাউন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস, বৈশ্বিক পর্যটন সংকোচনের কারণে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ লোকসানে পড়েছে এবং এর ফলে, ১৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে।' অক্সফামের প্রধান নির্বাহী বললেন, 'আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোথাও খুব গভীরে ত্রম্নটি রয়ে গেছে।' অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের এক্সিকিউটিভ গাব্রিয়েলা বুচের জানান, এই বৈষম্য রীতিমতো আপত্তিকর। এই বৈষম্যের হিংসাত্মক ভুলগুলোকে পাল্টা আঘাত করে সংশোধন করা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। লোভ, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপায়ে সুযোগসন্ধানী মনোবৃত্তি সবটা ধরা পড়েছে মহামারি আবহে। এই চরম অসাম্য অর্থনৈতিক সহিংসতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের 'ফোর্বস' সাময়িকীর তৈরি করা বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় রয়েছেন টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন, ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্টিভ বলমার, ওরাকলের সাবেক প্রধান নির্বাহী ল্যারি এলিসন, মার্কিন বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট, ফ্রান্সের ফ্যাশন জায়ান্ট এলভিএমএইচের প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট।