বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব

যুদ্ধ আটকাতে চায় জার্মানি

ম মস্কো আগ্রাসী মনোভাব দেখালে তার ফল ভোগ করতে হবে ম রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য
ম যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ আটকানোর সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালাবে জার্মানি। এমন কথা বলেছেন, জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গ্রিন পার্টির সদস্য আনালেনা বেয়ারবক। নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম একইসঙ্গে ইউক্রেন এবং রাশিয়া সফরে গেছেন তিনি। যাওয়ার আগে তিনি বলেছেন, যুদ্ধ আটকানোর জন্য যা করা দরকার, জার্মানি তাই করবে। একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রতি বার্তাও দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমেই রাশিয়াকে সমাধান সূত্রে পৌঁছাতে হবে। আগ্রাসী মনোভাব দেখালে মস্কোকে তার ফল ভোগ করতে হবে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি, বিবিসি

সোমবার ইউক্রেনে একাধিক বৈঠক করেছেন বেয়ারবক। আলোচনা করেছেন 'অরগানাইজেশন অফ সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ'র (ওএসসিই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এছাড়াও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা'র সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বেয়ারবক। প্রধানমন্ত্রী ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও তার বৈঠক হওয়ার কথা।

বৈঠক শেষে কুলেবা জানিয়েছেন, জার্মানি নতুন বিতর্কে মধ্যস্থতার বার্তা দিয়েছে। রাশিয়া যাতে ইউক্রেনে হামলা চালাতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখার কথা বলেছেন বেয়ারবক। একইসঙ্গে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন 'নর্ডস্ট্রিম ২' নিয়েও বেয়ারবককে ধন্যবাদ দিয়েছেন কুলেবা। সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সময় রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির এ বিষয়ে চুক্তি হলেও গ্রিন পার্টি বরাবরই এর বিরোধী। বিরোধের জন্যই বেয়ারবককে ধন্যবাদ দিয়েছেন কুলেবা। এই পাইপলাইন ইউক্রেনের ওপর দিয়ে যাওয়ার কথা। এবং তা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের তীব্র বিতর্ক আছে। এছাড়াও রাশিয়া প্রশ্নে এবং পূর্ব ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রশ্নে ফ্রান্সের সহযোগিতার বিষয়টিও জার্মানি দেখবে বলে ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়েছেন বেয়ারবক।

তিনি জানিয়েছেন, হেলসিঙ্কি চুক্তি গত ৯০ বছর ইউরোপকে বড়সড় যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছে। সেই চুক্তি যাতে বজায় রাখা যায়, তা সবাইকে দেখতে হবে। রাশিয়ার কোনোরকম আগ্রাসন বরদাস্ত করা হবে না। মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাশিয়ায় একাধিক বৈঠক করেছেন তিনি। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য

ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে পশ্চিমাদের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে আত্মরক্ষার জন্য ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ইউক্রেনে স্বল্পপালস্নার 'অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল' পাঠাবে তার দেশ। ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোরও কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তার ভাষায়, প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনাদের ছোট একটি দল পাঠানো হবে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ালেস আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে হামলা করতে পারে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো যথেষ্ট বৈধ ও বাস্তব কারণ রয়েছে। রাশিয়া অবশ্য বারবারই ইউক্রেনে যেকোনো ধরনের হামলার পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়ে এসেছে। মস্কোর দাবি, পশ্চিমা দেশগুলোই পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। তারপরও দেশটি বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী দাবিগুলো পূরণ না হলে তারা অনির্ধারিত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।

ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এমন প্রতিশ্রম্নতি চাইছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপ থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক এ জোটকেও পিছু হটতে বলছে তারা। এ নিয়ে গত সপ্তাহে শেষ হওয়া আলোচনা কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তাদের আত্মরক্ষায় সহায়তা করতে অস্ত্র চেয়েছে।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় রুশ হামলা ও ভূখন্ডটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পর ইউক্রেনের নৌবাহিনী পুনর্গঠনে সহযোগিতার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এরপর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৫ সাল থেকে বহু ব্রিটিশ সেনা দেশটিতে অবস্থান করছে।

যুক্তরাজ্য থেকে সমরাস্ত্রের প্রথম চালান সোমবার ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ঠিক কোন্‌ ধরনের সমরাস্ত্র পাঠানো হয়েছে, সেটি খোলসা করেননি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বেন ওয়ালেস জানান, 'নিজের সীমান্ত রক্ষার সব অধিকার ইউক্রেনের রয়েছে এবং নতুন এই অস্ত্র সহযোগিতার মাধ্যমে দেশটি সেই কাজ করতে সক্ষম হবে। স্বল্পপালস্নার এই ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা কেবলই প্রতিরক্ষামূলক কাজেই ব্যবহার করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ইউক্রেনে কৌশলগত কোনো অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে না এবং সেই কারণে যুক্তরাজ্যের পাঠানো অস্ত্র রাশিয়ার প্রতি কোনো ধরনের হুমকিও সৃষ্টি করছে না। আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই অস্ত্র ব্যবহার করবে ইউক্রেন।'

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেন, 'যুক্তরাজ্য অ্যান্টি-আর্মার, প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র ব্যবস্থাসহ একটি নতুন নিরাপত্তা প্যাকেজ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইউক্রেন স্বাগত জানায়।'

এর আগে ?যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে 'রাশিয়া তাদের সম্ভাব্য সামরিক হামলা' চালালে কঠোর ফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। ইউক্রেনের নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও যুক্তরাজ্য সহযোগিতা করছে। ওয়ালেস বলেন, সাম্প্রতিক সমস্যার পরিধিটা একটু বিস্তৃত হলেও তা সমাধানযোগ্য। কূটনীতির বিজয় সুনিশ্চিত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনও এটা চান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে