মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ইউক্রেন ইসু্যতে যুক্তরাজ্য

রুশপন্থিকে ক্ষমতায় বসাতে চায় মস্কো

ম কয়েকজনের নামও প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ম ইউক্রেন সীমান্ত অতিক্রম করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে রাশিয়াকে :ট্রাস
নতুনধারা
  ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক

ইউক্রেন ইসু্যতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ সামনে এনেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির অভিযোগ, ইউক্রেনে রুশপন্থি নেতাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কাজ করছে মস্কো। একই সঙ্গে হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের সাবেক কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে রাশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যোগাযোগ করছেন বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি। সংবাদসূত্র : বিবিসি

ব্যতিক্রমী এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্রেমলিনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইউক্রেনের সাবেক এমপি ইয়েভেন মুরায়েভের নামও প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের আরও চারজন রাজনীতিকের নাম বলেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর, যারা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আসছেন বলে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, এর মধ্যে কয়েকজন আছেন, যারা ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনায় কাজ করা রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।

ইউক্রেনে যেকোনো মুহূর্তে রুশ হামলার আশঙ্কার কথা গত কয়েক দিন ধরেই বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া এক লাখ সেনা সমাবেশ করেছে, তবে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে মস্কো জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস হুঁশিয়ার করেছেন, রাশিয়ার কোনো বাহিনী ইউক্রেন সীমান্ত অতিক্রম করলে 'মারাত্মক পরিণতি' ভোগ করতে হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আজ যে তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে, তা ইউক্রেনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় রাশিয়ার কর্মকান্ড এবং ক্রেমলিনের চিন্তা-ভাবনাকেই সামনে এনেছে। রাশিয়াকে অবশ্যই এ ধরনের কর্মকান্ড থামাতে হবে, আগ্রাসন ও অপপ্রচার বন্ধ করে কূটনীতির পথ অনুসরণ করতে হবে।'

ইউক্রেনবাসী সে দেশের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার পর রাশিয়া ২০১৪ সালে 'আগ্রাসন' চালিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। তখন থেকেই রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তের এলাকাগুলোর কাছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলে আসছে।

পশ্চিমা এবং ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলে আসছে, চলতি বছরের শুরুর দিকেই কোনো এক সময় আরেকটি হামলা বা অভিযানের পরিকল্পনায় রয়েছে মস্কোর। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, 'যুক্তরাজ্য ও আমাদের অংশীদাররা বারবার বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যেকোনো সামরিক অনুপ্রবেশ ঘটলে কৌশলগত বিশাল ভুল হবে, যার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।'

অনদিকে, হামলা পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বেশ কিছু দাবি করেছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে না নেওয়ার দাবি রয়েছে। এ ছাড়া, ন্যাটো যাতে সামরিক মহড়া না চালায় এবং পূর্ব ইউরোপে অস্ত্র সরবরাহ না করে, সেটিও চান পুতিন।

ইউক্রেন সরকারে নেতৃত্ব দিতে মস্কোপন্থিদের বসানোর পরিকল্পনার অভিযোগের জবাবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, 'ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করছে।' এই 'উসকানিমূলক কার্যক্রম এবং ফালতু আলাপ বন্ধ করার' আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার সরকার।

ক্রেমলিনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম আসা মুরায়েভ একটি মিডিয়া কোম্পানির মালিক। ২০১৯ সালের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় পার্লামেন্টে আসন হারান তিনি। ব্রিটিশ 'অবজারভার' পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, 'যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বিভ্রান্ত বলে তার মনে হচ্ছে। বিষয়টি যৌক্তিকও নয়। রাশিয়ায় আমি নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, সেখানে আমার বাবার ফার্মের টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।'

মস্কোপন্থি আরও যে চার ইউক্রেনিয়ান রাজনীতিকের নাম ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্যে এসেছে, তাদের একজন মাইকোলা আজারভ। রুশপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের অধীনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে ক্ষমতাচু্যত হয়ে আজারভ রাশিয়ায় পালিয়ে যান, যেখানে তাকে নির্বাসিত পুতুল সরকার হিসেবে দেখা হতো। 'আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের' অভিযোগে ইউক্রেন সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে 'রেড নোটিশ' জারি করেছিল মাইকোলা আজারভের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সাবেক উপ-প্রধান ভলোদিমির সিভকোভিচের নামও এসেছে। রুশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে গত সপ্তাহে তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা হলেন- সেরহি আরবুজভ এবং আন্দ্রি ক্লুয়েভ, তারা দুইজনেই প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ইউক্রেনে হামলার আশঙ্কার মধ্যেই শুক্রবার জেনেভায় জরুরি বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এর আগে বৃহস্পতিবার বিস্নংকেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার কোনো বাহিনী ইউক্রেন সীমান্ত অতিক্রম করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনের কূটনৈতিক চেষ্টাতেই বিস্নংকেন গত সপ্তাহে ইউরোপ সফর করেন। ইউক্রেনে রাশিয়া কোনোরকম আগ্রাসনের চেষ্টা করলে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে মিত্রদেশগুলোর সমর্থন আদায় করাও ছিল তার এই সফরের লক্ষ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে