বিশেষ প্রতিবেদন

আফগান খনিজ সম্পদে চোখ ট্রাম্পের

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের ঘুরিয়ান লৌহ খনি হলো যুক্তরাষ্ট্র-উজবেকিস্তান খনি প্রকল্পের নিখুঁত পাইলট বিনিয়োগ টাগের্ট। আফগান প্রেসিডেন্টের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কায়ুমির বক্তব্য এটি। গত মে মাসে ওয়াশিংটনে ট্রান্স-ক্যাসপিয়ান ফোরামে ক্যাপিটল ইন্টেলিজেন্সে বক্তৃতাকালে কায়ুমি বলেন, ইরান সীমান্তে থাকা ঘুরিয়ান খনিটি আফগানিস্তানের উত্তর ও দক্ষিণে এবং এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতে লোহার আকরিক সরবরাহ করতে পারে। নতুন খনি খাতটি যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেয়াটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য প্রস্তুত করা মাকির্ন পররাষ্ট্র দপ্তরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের সঙ্গে সাংঘষির্ক। তাতে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে বেসরকারি খাতের খনি বিনিয়োগের মতো পরিকাঠামো, পরিবহন, নিয়মকানুন বা পরিবেশ নেই। কিন্তু গত ১৬ মে উজবেক প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ এবং ১৮ জানুয়ারি কাজাখ প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ যুক্তরাষ্ট্র সফর করে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ বিলিয়ন (এক হাজার ৫০০ কোটি) ডলার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের চুক্তিতে পেঁৗছতে পেরেছেন। আফগান অথর্নীতির একটি গুরুত্বপূণর্ কৌশল হলো একে ঢেলে সাজানো। এর মাধ্যমে দেশটির প্রতি আকষর্ণ সৃষ্টি হবে। আর এদিক থেকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে খনি। দেশটি লোহা, কপার, লিথিয়াম; এমনকি সোনার খনিতেও সমৃদ্ধ। নোভা স্কটিয়া ব্যাংকের এক খনি ব্যাংকার বলেন, আফগানিস্তান হলো খনি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘এল ডোরাডো’। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা সমস্যার কারণে পাশ্চাত্যের খনি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এটি চীন ও রাশিয়ার জন্য বিশেষ ক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র-উজবেক সরকারের মধ্যকার সম্পকর্ বেশ শক্তিশালী। তবে মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে গতিশীল ব্যবসায়িক নেতৃত্ব নেই। তবে ব্যতিক্রমী হলেন উজবেক-রুশ ইস্পাত ও মিডিয়া মুঘল আলিশার উসমানভ। রাশিয়ান/ইউক্রেনিয়ান ইস্পাত গ্রæপ মেটালোনভেস্টের মালিক ও মাকর্ জুকারবাগের্র ফেসবুকের প্রথম দিকের বিনিয়োগকারী (ডিজিটাল স্কাই টেকনোলজি গ্রæপের মাধ্যমে) উসমানভ এখনো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম শক্তিশালী ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বিশ্বের ৩৭তম ধনী। তার একটি সুবিধা হলো, রেনোভাব গ্রæপের মালিক ভিক্টর ভেকসেলবাগর্ বা সাবেক রুসাল প্রধান ওলেগ ডেরিপাস্কার মতো মাকির্ন অবরোধে পড়েননি তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, উসমানভ এমন এক ব্যক্তি, কেবল যিনি উজবেক খনি কোম্পানিগুলোকে আফগানিস্তানে নিয়ে যেতে সক্ষম। আর এটি এমন সময়ে তিনি করতে পারছেন, যখন পাশ্চাত্য ব্যাংক ও বিনিয়োগ আফগানিস্তানে যেতে আগ্রহী। আফগানিস্তানে মাকির্ন সামরিক বাহিনীর অগ্রগতির অভাবে হতাশ হয়ে ট্রাম্প তার প্রশাসনকে দেশটির খনি শিল্পে বেসরকারি মাকির্ন বিনিয়োগ বাড়ানোর নিদের্শ দিয়েছেন। বব উডওয়াডের্র ‘বেস্ট সেলিং হোয়াইট হাউস এক্সপোস ফেয়ারে (মেলা) বলা হয়, অব্যাহতভাবে হতাশ হয়ে ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়কের্ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আজারবাইজানি নেতা তাকে বলেন, চীনারা আফগানিস্তানে কপার খনিতে বিনিয়াগ করছে। এতে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে যুক্তরাষ্ট্র, অথচ চীন কপার নিয়ে যাচ্ছে! তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির। দেশটির পাহাড়গুলোতে বিপুল পরিমাণে খনিজ সম্পদ রয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রচুর অথর্ উপাজর্ন করা সম্ভব। সেখানে লিথিয়ামের মতো দুলর্ভ অনেক খনিজ সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। ওই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল এইচ আর ম্যাকমাস্টারকে আফগানিস্তানে খনি খাতে মাকির্ন বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নিদের্শ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের প্রতিবেদনে নেতিবাচক কথা বলেছিল। তাছাড়া তারা এটাও বলেছিল, চীনারা আফগানিস্তান থেকে কিছু নিচ্ছে না। তবে এই প্রতিবেদন সবাই মেনে নেয়নি। এক কানাডিয়ান খনি ব্যাংকার বলেছিলেন, চীন, রাশিয়া, তাজিক আর উজবেকরা আফগানিস্তানে খনি কাযর্ক্রম চালাচ্ছে। তা ছাড়া তালেবানও খনিজ সম্পদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। এই অথর্ দিয়েই তারা মাকির্ন ও ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাই মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন আফগানিস্তানের খনি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য তিনি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর