নতুন করে বঁাচতে শিখছেন সিরিয়ার যুদ্ধাহত অন্ধরা

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
একজন অন্ধকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
সিরিয়ার আসাদবিরোধী বিদ্রোহী বাহিনীর সাবেক যোদ্ধা আহমেদ তালহা যুদ্ধে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তিনি এখন অন্ধদের স্মাটের্ফানের বিভিন্ন নিদের্শনা অনুবাদ করে দিচ্ছেন। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পোর একটি ক্লাসরুমে তিনি তার মতো অন্ধদের সহায়তা করছেন। তিনি একটি স্ক্রিন রিডার অ্যাপের সহায়তায় তাদের আরও ভালোভাবে স্মাটের্ফান চালানো শেখাচ্ছেন। তালহা (২৪) বলেন, ‘আমার খুবই ইচ্ছে, সব অন্ধ যেন তাদের ডিভাইসের সবোর্ত্তম ব্যবহার করতে পারে।’ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর আঞ্জারায় কিশোর থেকে সব বয়সী মানুষ গভীর মনযোগের সঙ্গে ফোন হাতে নিয়ে নিদের্শনা শুনছেন। ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মাদ রমজান বলেন, ‘আপনারা আপনাদের হোয়াটসঅ্যাপ খুলুন।’ তিনি বাদামি চামড়ার জ্যাকেট পরে আছেন, চোখে সানগøাস। ছাত্ররা ম্যাসেজিং সাভির্স খুঁজতে স্ক্রল করে যাচ্ছে। ক্লাসরুমটি ক্ষীণ কৃত্রিম কণ্ঠস্বরে গম গম করে উঠছে। কৃত্রিম কণ্ঠস্বরের নিদের্শ মতো অন্ধরা নিদির্ষ্ট আইকন খুঁজে নিচ্ছেন। কণ্ঠস্বরগুলো নারী ও পুরুষ উভয়েরই। কৃত্রিম কণ্ঠগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ দ্রæতগতিতে নিদের্শনা দেয়। তালহা বলেন, তিনি অনলাইনে এই ইংরেজি স্ক্রিন রিডার অ্যাপ্লিকেশন পেয়েছেন। তিনি এর নিদের্শনাগুলো তার বন্ধুদের আরবিতে অনুবাদ করে দেন। অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারকারীকে বলে দেয়, তারা কোন্ পেজে আছে, তারা এর মাধ্যমে কী করতে পারে এবং অ্যাপ্লিকেশনটি ওই পেজের লেখাগুলো অন্ধদের পড়ে শোনায়। তালহা কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেন। কিন্তু দুই বছর পর মাথায় গুলি লাগলে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এই যুুবক বলেন, ‘আমি হার মানিনি। নতুন করে বঁাচার চেষ্টা করছি।’ প্রথম বিয়ের পর তালহা দ্বিতীয় বিয়ে করে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি অপর এক নারীর সঙ্গেও সম্পকের্ জড়িয়ে পড়েছেন। ওই নারীও অন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ডান চোখে সামান্য দেখতে পাই।’ তিন সন্তানের এই জনক বলেন, ‘মনে হয় ঘোর অন্ধকারের মধ্যে সামান্য আলো। অনেকটা বড় একটি ঘরের মধ্যে মোমবাতির ক্ষীণ আলো।’ বাড়িতে এসে তালহা তার এক বছর বয়সী মেয়ে আলিকার হাত ধরে তাকে হঁাটতে সহায়তা করেন। তিনি তার তিন বছরের ছেলে হাসানের ফোনে ইউটিউবের মাধ্যমে কথা বলেন। মাসখানেক আগে তার প্রথম স্ত্রী আরেকটি মেয়ের জন্ম দিয়েছেন। তার প্রথম স্ত্রী সামিয়া বলেন, ‘আমাদের জীবনে কিছুরই অভাব নেই।’ তিনি তার স্বামীকে নিয়ে গবর্ করে বলেন, ‘তাকে কিছুই থামাতে পারে না।’ তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললেও তার একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ স্কুল সম্পকের্ তালহা বলেন, ‘এটা অন্ধদের স্থান। আমরা এক জায়গায় জড়ো হয়েছি, আমরা সক্রিয়, আমরা আমাদের অধিকার চাই।’ নিজেরাই পাথর নিমির্ত একতলা স্কুল ভবনটির অধিকাংশ অথর্ সংগ্রহ করেছেন। সামান্য সহায়তাও এসেছে। প্রতিদিন বন্ধুদের সহায়তায় হেঁটে বেশ কিছু অন্ধ মানুষ এখানে শিখতে আসেন। পরিচালক আহমেদ খলিল বলেন, এই সেন্টারটি বিমান হামলাসহ সাত বছরের সিরীয় যুদ্ধে যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদসূত্র : এএফপি অনলাইন