শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চার মাস

এখনো নির্ধারণ হয়নি জয়-পরাজয়

ধ্বংসস্তূপে পরিণত কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অঞ্চল কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ 'অ্যাডমিরাল মাকারভ'
ম যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ মে ২০২২, ০০:০০
রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ 'অ্যাডমিরাল মাকারভ'

পশ্চিমা দেশগুলোর ভাষায় আগ্রাসন। আর রাশিয়ার ভাষায় ইউক্রেনে নব্য নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান। গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি শুরু হওয়া এই 'অভিযান-আগ্রাসন' আজ (মঙ্গলবার) চার মাসে পা দিল। এখনো থেমে থেমে চলছে দুই পক্ষের লড়াই। দেশ দুটির টানা তিন মাসের লড়াইয়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। আধুনিক অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অঞ্চল। জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ইউক্রেনের বহু নাগরিক। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা

কয়েকবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও নিজ অবস্থানে অনড় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ফলে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ শেষ হতে আরও সময় লাগবে। কারণ ইউক্রেন পশ্চিমাদের সহযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ইউক্রেন সেনাদের প্রতিরোধের মুখে কিয়েভ দখল করতে পারেনি রাশিয়া। তবে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে রুশ সেনারা। এর মধ্যে অবশ্য দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে রাশিয়া। তবে শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমা দেশগুলো। দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামানোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছে তারা। যদিও এসব নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা করে রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি তিন দিক থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করে রুশ সেনারা। আতঙ্কে কিয়েভ ছাড়ে হাজার হাজার ইউক্রেনীয়। পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশের আগে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। গত ২১ ফেব্রম্নয়ারি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। পুতিনের এই ঘোষণার পরপরই শুরু হয় ইউক্রেন অভিযান।

উলেস্নখ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে রয়েছে ন্যাটো। ন্যাটোর আওতায় রয়েছে ৩০টি দেশ। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি। আর এই গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে ইউক্রেন। এ ঘটনা নিয়েই মূলত দেশ দুটির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। বিভিন্ন ইসু্যতে আগে থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে রয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশের তালিকায়।

কেন ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাশিয়া ক্ষুব্ধ? কেন ইউক্রেনের এই পদক্ষেপকে আটকাতে চাইছেন পুতিন? এর নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ন্যাটোভুক্ত যে কোনো দেশে বহিরাগত আক্রমণের ক্ষেত্রে বাকি সদস্য দেশগুলোর সহায়তা পেয়ে যায় ওই সংশ্লিষ্ট দেশ। আর রাশিয়ার প্রতিবেশী ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে সহায়তা করতে আসবে সদস্য দেশগুলো। আর এতেই ক্ষুব্ধ রাশিয়া। তাছাড়া ২০১৪ সালে রাশিয়া প্রথমবার ইউক্রেনে প্রবেশ করে। তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন সমর্থিত বিদ্রোহীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বেশ বড় একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই তারা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে। যুদ্ধ বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক 'মিনস্ক শান্তিচুক্তি' হয়েছিল, কিন্তু লড়াই তাতে থামেনি। আর এ কারণেই রাশিয়ার নেতা বলছেন, ওই অঞ্চলে তিনি 'শান্তিরক্ষী' পাঠিয়েছেন।

কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ 'অ্যাডমিরাল মাকারভ'

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে। এজন্য দেশটি 'অ্যাডমিরাল মাকারভ' নামে নতুন একটি যুদ্ধজাহাজকে ফ্লাগশিপ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি ক্রিমিয়ার বন্দর নগরী সেবাস্টপোটল থেকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ওডেসার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

এর আগে অধিকৃত ক্রিমিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা 'তাস' জানায়, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌবহরের ফ্লাগশিপ হতে যাচ্ছে অ্যাডমিরাল মাকারভ। এটি 'মস্কভা' যুদ্ধজাহাজের স্থলাভিষিক্ত হবে। গত মাসের মাঝামাঝি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হামলায় কৃষ্ণসাগরে ডুবে যায় মস্কভা। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, অ্যাডমিরাল মাকারভ কৃষ্ণসাগর প্রবেশ করায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে