ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদোয়াদর্ ফিলিপ

সহিংসতার পর জনগণের ঐক্য চাইলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী

‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন ‘কোনো করই জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না’ আন্দোলনে সমথর্ন ৬৬ ভাগ মানুষ, ম্যাখেঁার জনপ্রিয়তা কমেছে ২৩ শতাংশ

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদোয়াদর্ ফিলিপ
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদোয়াদর্ ফিলিপ দেশে জাতীয় ঐক্য পুনঃস্থাপনের শপথ নিয়েছেন। গত চার সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চলছে দেশটিতে, যা সাম্প্রতিক সময়ে সহিংস আকার ধারণ করেছে। চার সপ্তাহ আগে জ্বালানি তেলে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখেঁার সরকারের বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকদের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বা ‘হলুদ পোশাক’ পরে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে জীবনযাত্রার মানের ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদেও। ক্রমান্বয়ে আন্দোলনটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। শনিবারও প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় নেমে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ কঁাদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ পযর্ন্ত প্রায় এক হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্ প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ শনিবার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার শপথ ব্যক্ত করে বলেন, ‘শান্তিপূণর্ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলবে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো করই আমাদের জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। আমরা অবশ্যই এখন আলোচনা, কাজ ও একসঙ্গে হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য পুনঃস্থাপন করব।’ আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ম্যাখেঁাকে পদত্যাগ করতে হবে। অনেকে তাকে ‘ধনীদের প্রেসিডেন্ট’ হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আলোচনার গতি বাড়াতে শিগগিরই যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’ জীবন ধারনের বাড়তি ব্যয় ও জ্বালানি করের বিরুদ্ধে পথে নেমে আসা ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীদের দমাতে শনিবারও পুলিশকে কঁাদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হয়েছে। এদিন প্রায় এক হাজার লোককে আটক করা হলেও সহিংসতার মাত্রা আগের সপ্তাহের তুলনায় কম ছিল। এদিন ফ্রান্সজুড়ে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমেছিল বলে ধারণা ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আন্দোলন ঠেকাতে সরকার দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করেছিল। রাজধানী প্যারিসে মোতায়েন আট হাজার সদস্যের সঙ্গে ১২টি সঁাজোয়া যানও ছিল। শরিবার প্যারিসের বিক্ষোভটিই ছিল সবচেয়ে সহিংস। সেখানে হাজার দশেক আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে অংশ নেয়। তাদের সহিংস অংশটি বাড়িঘর ও দোকানপাটের জানালা ভাঙে, গাড়িতে আগুন দেয় ও লুটপাট চালায়। গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজগুলোতে পুলিশকে আন্দোলনকারীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে। বুলেটে আহতদের মধ্যে অন্তত তিনজন গণমাধ্যম কমীর্ আছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘষের্ ১৭ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্টেনার জানিয়েছেন। এদিকে, আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কাযর্কর ভ‚মিকা রাখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের প্রশংসা করেছেন। শনিবার এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ম্যাখেঁাও ‘সাহস ও অভাবনীয় দক্ষতা দেখানোয়’ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট পরে অংশ নিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা, যার কারণে আন্দোলনটি ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন নামে পরিচিতি পেয়েছে। আন্দোলনে এখন পযর্ন্ত অন্তত চার জন নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সদস্যকে মাঠে নামানো সত্বেও আন্দোলনকারীদের দমানো যায়নি। ‘ইয়োলো ভেস্ট’ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠছে। অথৈর্নতিক দুদর্শার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দরিদ্রদের তুমুল অনাস্থা আন্দোলনকে গতি দিয়েছে বলেও ধারণা পযের্বক্ষকদের। ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলন শুরু হয় গত নভেম্বরে। জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাবকে প্রশমিত করতে জ্বালানির কর বাড়ায় ফরাসি সরকার। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে চাপ পড়েছে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। ফরাসি সরকারের অভিযোগ, আন্দোলনটি সংক্ষুব্ধ সাধারণ ফরাসিদের দ্বারা সংঘটিত হলেও এখন সেটি চরম ডানপন্থি এবং নৈরাজ্যবাদীদের দখলে চলে গেছে। তারা সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। এদিকে শুক্রবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপে আন্দোলনের প্রতি ৬৬ শতাংশ মানুষের সমথর্ন আছে বলে দেখা গেছে। উল্টোদিকে, প্রেসিডেন্ট ম্যাখেঁার জনপ্রিয়তা কমেছে ২৩ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর ভর করে ফ্রান্সজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিমÐলেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।