দ্রæত উধাও হয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন

বিজ্ঞান

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পৃথিবী থেকে দ্রæত উধাও হয়ে যাচ্ছে আমাদের শ্বাসের বাতাস! অক্সিজেন। এত দ্রæত হারে তা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে মহাকাশে যে, রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে ওজনে হালকা হয়ে পড়ছে পৃথিবী। নাসার বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে, বিভিন্ন রকমের গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যেমনটা ভাবা হয়েছিল, পৃথিবীর বায়ুমÐল প্রায় সেভাবেই উত্তরোত্তর পাতলা হয়ে এলেও বাতাসের অক্সিজেন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রæত হারে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দেখা গেছে, সেই হারে কিন্তু পৃথিবী খুইয়ে ফেলছে না গাছপালাদের রান্নাবান্নার (সালোক-সংশ্লেষণ) জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাস কাবর্ন ডাই-অক্সাইড। অক্সিজেনের মতো দ্রæতহারে পৃথিবীতে কমে যাচ্ছে না বাতাসের নাইট্রোজেন ও মিথেন। যা বেঁচে থাকার জন্য খুব কাজে লাগে অণুজীবদের। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বহু কোটি বছর আগে এমন দশাই হয়েছিল প্রতিবেশী ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের। উদ্বেগ বাড়ছে বলেই ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেছে বিজ্ঞানীদের, কেন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রæত হারে উধাও হয়ে যাচ্ছে শ্বাসের বাতাস, এর কারণ জানতে। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে সেই লক্ষ্যেই নরওয়ের উত্তর উপক‚ল থেকে পাঠানো হয়েছে ‘ভিশন-২’ সাউন্ডিং রকেট। অভিনব রকেট। যাকে নিদির্ষ্ট লক্ষ্যে পাঠানোর কয়েক মুহ‚তর্ পরই ফিরিয়ে আনা যাবে পৃথিবীতে। এই সময় নরওয়ের উত্তর উপক‚লে আকছারই দেখা যায় অরোরা বোরিয়ালিস। মেরুজ্যোতি। কয়েক লহমায় এরই মধ্যে ঢুকে গিয়ে খবরাখবর নিয়ে ফিরে আসবে ওই সাউন্ডিং রকেট। তবে শুধু রকেট ছুড়েই তাদের কাজ শেষ করেননি বিজ্ঞানীরা। মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে নাসার গডার্ডর্ স্পেস সেন্টারের একটি গবেষকদলও পেঁৗছে গেছে নরওয়ের উত্তর উপক‚লে। কীভাবে বাতাসের অক্সিজেন, আমাদের শ্বাসের বাতাস মহাকাশে দ্রæত উধাও হয়ে যাচ্ছে, এর ওপর নজর রাখতে। নাসার ওই গবেষকদলের অন্যতম সদস্য হাভার্ডর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিমাদ্রি সেনগুপ্ত বলেন, ‘পৃথিবীর বায়ুমÐল পাতলা হয়ে যাওয়া, শ্বাসের বাতাস অক্সিজেনের মহাকাশে দ্রæত চলে যাওয়ার পেছনে বড় ভ‚মিকা রয়েছে অরোরা বোরিয়ালিসের।’ পৃথিবীর বায়ুমÐল যে উত্তরোত্তর পাতলা হয়ে আসছে, এর ধারণাটা আমাদের প্রথম জন্মেছিল গত শতাব্দীর গোড়া দিকে। ১৯০৪ সালে এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন স্যার জেমস জিনস। তার ‘দ্য ডাইনামিক্যাল থিয়োরি অফ গ্যাসেস’ তাত্তি¡কভাবে জানিয়েছিল, পৃথিবীর বায়ুমÐল এক দিন আমাদের ছেড়ে মহাকাশে হারিয়ে যাবে। সেই দিন পৃথিবীর আর কোনো বায়ুমÐল থাকবে না। ফলে, বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপকরণটি আর পাবে না এই নীলাভ গ্রহের জীবজগৎ। তবে সেটা হতে সময় লাগবে আরও অন্তত ১০০ কোটি বছর।? কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বায়ুমÐলের ক্রমে পাতলা হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা অত ধীরে ঘটছে না। নরওয়ের উত্তর উপক‚লে নাসার ‘ভিশন-২’ মিশনের প্রধান বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডগ রাউল্যান্ড বলেন, প্রতিদিন পৃথিবীর কয়েকশ টন বায়ুমÐল আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে মহাকাশে। এর ফলে, খুব দ্রæত হারে তার ওজন হারিয়ে ফেলছে এই গ্রহ। পৃথিবী দ্রæত হালকা হয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন পরমাণুর যে পরিমাণ শক্তি রয়েছে, এর অন্তত ১০০ গুণ শক্তি প্রয়োজন বাতাসের অক্সিজেনকে পুরোপুরি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে হলে। তা সত্তে¡ও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রæত হারে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে অক্সিজেন। গত শতাব্দীর ছয় বা সাতের দশকেও অক্সিজেনের এই দ্রæত প্রস্থানের অঁাচ মেলেনি। আরও একটি বিষয় খুব চমকে দিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের। সেটা হলো, পৃথিবীর ধারেকাছে যেখান থেকে সত্যি-সত্যি শুরু হচ্ছে মহাকাশের ‘সীমানা’ (স্পেস), এর আশপাশের এলাকা কাযর্ত গিজগিজ করছে অক্সিজেনের আয়নের ভিড়ে। গবেষকরা দেখেছেন, সেই অক্সিজেনের ভিড়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়া অক্সিজেন আয়নের সংখ্যাই বেশি। হাইড্রোজেন পরমাণু বা আয়নের চেয়ে অক্সিজেন পরমাণু বা আয়ন দ্রæত হারে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাকাশে চলে যাচ্ছে। এটা তো হওয়ার কথা নয়। কারণ, হাইড্রোজেন পরমাণুর চেয়ে ১৬ গুণ ভারী অক্সিজেন পরমাণু। তা হলে হালকা হাইড্রোজেন পরমাণুর চেয়ে কেন দ্রæত হারে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাচ্ছে অক্সিজেন, এখনো এর কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, নাসা