কংগ্রেসমুক্ত ভারতের স্বপ্ন অধরা মোদির

পঁাচ বিধানসভা নিবার্চনে ভরাডুবি

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদি
শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সাল থেকে। ভারতের ছত্তিশগড়. মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে জিতে বিজেপি সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৪ সালের ‘মোদি ঝড়ে’ কেন্দ্র দখলের পরবতীর্ সময়ে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ বাদে দেশটির যে কয়টি রাজ্যে ভোট হয়েছে, বিজেপি সেখানে দারুণ ফল করেছে। আর না হয় সরকার গঠন করেছে। ওই ঝড়ে উত্তর-পূবর্ ভারত কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। পাশাপাশি কাশ্মির, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো বড় রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় গেছে। একই সঙ্গে, গোয়া, আসাম, ত্রিপুরার মতো রাজ্য বিজেপি ছিনিয়ে নেয়। সেখান থেকেই ‘কংগ্রেসমুক্ত’ ভারত গড়ার ¯েøাগান তৈরি করে ফেলেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন সভায় ঘটা করে কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার আহŸান জানান। গত বছরে গুজরাট ভোটের ফলের কয়েকদিন আগে রাহুল গান্ধীকে দলের সভাপতি করা হয়। তারপর নিবার্চনের ফল বেরোতে দেখা যায়, কংগ্রেস বিজেপিকে জোর টক্কর দিয়েছে। তবে তারপরও ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুরের নিবার্চনে কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে পারেনি। তবে কণার্টকের নিবার্চনে ফের ঘুরে দঁাড়ায় কংগ্রেস। জেডিএস তথা জনতা দলকে (সেক্যুলার) সঙ্গী করে বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিজেরা কণার্টকের মসনদে জোটসঙ্গী হিসেবে বসে পড়ে। তারপর এবারের পঁাচ রাজ্যের ভোটে এসে প্রমাণ হয়ে গেল, কংগ্রেসকে মুছে ফেলা সহজ নয়। ভারতের সবচেয়ে পুরনো দল নানা রাজ্যে যেভাবে ভিত জমিয়ে রেখেছে, তাতে সরকারে না যেতে পারলেও ‘পথের কঁাটা’ হয়ে উঠতে পারে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া এখন আঞ্চলিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে লোকসভা নিবার্চনে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। ফলে সেদিক থেকে দেখলে এখন বিপদে বেশি বিজেপির। কংগ্রেস তো রয়েইছে, সঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীরা একজোট হয়ে বিজেপি বিরোধিতায় পথে নেমেছে। ফলে এখন বিজেপিই পাল্টা চাপে পড়ে গেল। এখান থেকে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা কোন্ পরিকল্পনায় বিজেপিকে ওপরে তুলে নিয়ে যেতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। লোকসভার আগে মঙ্গলবার পঁাচ রাজ্যের ফলের দিকে নজর ছিল পুরো ভারতের। আর পঁাচ রাজ্যেই বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। নিজেদের দখলে থাকা তিনটি রাজ্য হারিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেই সঙ্গে তেলেঙ্গানা তথা মিজোরামে প্রতিদ্ব›িদ্বতাই গড়ে তুলতে পারেনি। এসবের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় চিন্তায় রাখবে গেরুয়া শিবিরকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ ভারতে তিনটি রাজ্যে দীঘির্দন ধরে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এমনকি যখন কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল তখনো নিজেদের এই দুগর্ অটুট রেখেছিল। কিন্তু এবারে সেই চেনা দুগর্ও হতাশ করেছে বিজেপিকে। নিজেদের এই ঘঁাটি হারানো মোদি-অমিত শাহদের চিন্তায় রাখবেই। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়। প্রকৃত গ্রামীণ ভারত বলতে যা বোঝায়, এই তিন রাজ্য তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিন রাজ্যের ফলে স্পষ্ট গ্রামীণ ভারতে বিজেপিকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত কংগ্রেস। মূলত কৃষক অসন্তোষকে হাতিয়ার করে তিন রাজ্যেই প্রচারে নেমেছিলেন রাহুল গান্ধী। রাজস্থান কৃষকদের ভোটে বামপন্থিরা কিছুটা ভাগ বসালেও অন্য রাজ্যগুলোতে গ্রামীণ ভোটব্যাংক কংগ্রেসেরই দখলে গেছে। গুজরাট নিবার্চনে পিছিয়ে থেকেও শেষ পযর্ন্ত জিতে গিয়েছিল বিজেপি, কণার্টকে পিছিয়ে থেকেও শেষ পযর্ন্ত একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপি। এসবের পেছনে ছিল শেষ মুহ‚তের্ নরেন্দ্র মোদির প্রচারণা। কাযর্ত ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় ডুবন্ত নৌকা থেকে দলকে টেনে তোলেন মোদি। কিন্তু হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যে মোদি ক্যারিশমাও বঁাচাতে পারল না বিজেপিকে। বিরোধীরা বলছে, ভারতের রাজনীতিতে মোদিই শেষ কথা, এই মিথে অবসান ঘটল। তখনও রাফায়েল যুদ্ধবিমান ইস্যু দানা বাধেনি, তখনও কংগ্রেস আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। কিন্তু তখন কাযর্ত একার হাতে এই ইস্যুগুলো নিয়ে লড়াই করেছেন রাহুল। সীমিত শক্তি নিয়েও চেষ্টা করেছেন বিজেপিকে কোনঠাসা করার, অনেক সময় অন্য বিরোধীরাও সমথর্ন করেনি। কংগ্রেসের হিন্দুবিরোধী ভাবমূতির্ বদলে নরম হিন্দুত্বের পন্থা নিয়েছেন, যা বেশ সমালোচিতও। কিন্তু বলতেই হবে রাহুলের এই অবস্থান বদল কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দিচ্ছে। এর আগে একাধিক উপনিবার্চনেও দেখা গেছে সেই সাফল্যের প্রমাণ। সভাপতি হিসেবে প্রথম বড় পরীক্ষাতেও উত্তীণর্ রাহুল। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস সভাপতিকে অনেকেই মোদির বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। সংবাদসূত্র : ওয়ান ইনডিয়া, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস