মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কার

নূপুর শর্মার উচিত দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া

আজ যা হচ্ছে, তার জন্য তিনি একাই দায়ী : আদালত
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
নূপুর শর্মা

মহানবীকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য নূপুর শর্মাকে শুক্রবার তিরস্কার করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বললেন, নূপুরের উচিত দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিচারপতি সূর্যকান্ত সরাসরি বলেছেন, 'নূপুর সারা দেশে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। আজ যা হচ্ছে, তার জন্য তিনি একাই দায়ী।' সংবাদসূত্র : পিটিআই, এএনআই, ডিডাবিস্নউ নিউজ

কিছু দিন আগে একটি টিভি-বিতর্কে নূপুর মহানবীকে (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। বিচারপতি জানিয়েছেন, 'আমি দেখেছি, কীভাবে নূপুরকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে তিনি ওইসব কথা বলেছেন এবং পরে বলেছেন, তিনি একজন আইনজীবী, তা লজ্জাজনক। তার উচিত পুরো দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।'

বিচারপতি সূর্যকান্ত দিলিস্ন পুলিশের কাজেরও কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'দেখে মনে হচ্ছে, দিলিস্ন পুলিশ নূপুরের জন্য লাল কার্পেট পেতে রেখেছে। অন্য কারও বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নূপুরকে করা হলো না।'

আদালতের কাছে নূপুরের আর্জি ছিল, তাকে হত্যার ভয় দেখানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে অনেক এফআইআর করা হয়েছে। সব এফআইআর দিলিস্নতে নিয়ে আসা হোক। পরে এই আবেদন প্রত্যাহার করে নেন নূপুর। তার আগে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, 'নূপুরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, নাকি তিনি দেশের কাছে বিপদের কারণ হয়ে উঠেছেন।

নূপুরের আবেদন ছিল, তার প্রতি সমান ব্যবহার করতে হবে, কোনো ভেদাভেদ করা চলবে না। তখনই বিচারপতি বলেন, 'যখন আপনি কারও বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে যখন এফআইআর হয়, তখন কেউ আপনাকে ছুঁতে সাহস পান না।' বিচারপতি বলেছেন, 'নূপুরের কথা থেকেই স্পষ্ট, তিনি একগুঁয়ে ও উদ্ধত। তিনি একটি দলের মুখপাত্র। তিনি মনে করেন, তার সঙ্গে ক্ষমতা রয়েছে। যার জোরে তিনি দেশের আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে কথা বলতে পারেন।'

নূপুরের আইনজীবী বলেন, টিভির সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতি বলেন, 'তাহলে সেই সঞ্চালকের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত।' আইনজীবীর সওয়াল ছিল, গণতন্ত্রে সবার কথা বলার অধিকার আছে। তখন বিচারপতি তীর্যকভাবে বলেন, 'হঁ্যা, গণতন্ত্রে সবার বলার অধিকার আছে। গণতন্ত্রে ঘাসের অধিকার আছে বেড়ে ওঠার এবং গাধারও অধিকার আছে সেই ঘাস খাওয়ার।'

আইনজীবীরা বলেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে মানতে হবে। বিচারপতির মন্তব্য হলো, 'নূপুর শর্মা সাংবাদিকের অধিকার পেতে পারেন না। তিনি সাংবাদিক নন। যখন তিনি কোনো টিভি বিতর্কে যান, দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন, তার কী প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাও তিনি মাথায় রাখেন না। সমাজের ওপর তা গিয়ে ধাক্কা মারে।'

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

এদিকে, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, 'নূপুর শর্মাকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ সুদূরপ্রসারী। বিচারপতি এটাও বলেছেন, রাজস্থানের উদয়পুরের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্যও নূপুর দায়ী। এই পর্যবেক্ষণের পর ক্ষমতাসীন দলের লজ্জায় মাথা হেঁট হওয়া উচিত। সর্বোচ্চ আদালত তাদের সামনে একটি আয়না ধরে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আজ আমাদের এই বিভেদকারী মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে