অভিযোগ ইউক্রেনের

ফসফরাস বোমা ফেলেছে রাশিয়া

বেসামরিক লক্ষ্য বস্তুতে এ অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ম ইউরোপ নিয়ে ন্যাটোর নতুন পরিকল্পনা, রাশিয়ার নিন্দা

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ

কৃষ্ণ সাগরের স্নেক আইল্যান্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর দ্বীপটিতে রুশ বাহিনী ফসফরাস বোমা ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মালিকানাধীন ওই দ্বীপ এলাকা থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার একদিন পরেই এমন অভিযোগ সামনে এলো। স্থানীয় সময় শুক্রবার এক টেলিগ্রাম পোস্টে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, রুশ নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া অঞ্চল থেকে দু'টি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান উড়ে এসে ফসফরাস বোমা ফেলেছে। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা ইইক্রেনের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে সংযুক্ত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, একটি বিমান দ্বীপে কমপক্ষে দুইবার বোমা নিক্ষেপ করেছে। এ সময় সাদা দাগ দেখা যাচ্ছিল। উলেস্নখ্য, ফসফরাস বোমা নিক্ষেপের পর এটি আকাশে সাদা ধোঁয়া বিচ্ছুরণ করে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এ অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর জন্য ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথমদিকে তারা স্নেক আইল্যান্ড নামে যে ক্ষুদ্র দ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল, তা থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। দ্বীপটির ওপর ইউক্রেনের তীব্র আক্রমণের পর রাশিয়া এ কথা জানায়। সে সময় মস্কো জানায়, স্নেক আইল্যান্ড থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি একটি 'শুভেচ্ছা সূচক পদক্ষেপ' এবং এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইছে, ইউক্রেন থেকে কৃষিপণ্য পরিবহণের পথে রাশিয়া কোনো বাধা সৃষ্টি করছে না। কিন্তু ইউক্রেন সরকার বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান দিয়ে আক্রমণ চালানো হলে রুশ সেনারা তড়িঘড়ি করে দু'টি স্পিডবোটে চেপে দ্বীপটি ছেড়ে চলে যায়। রাশিয়ার এ পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন ইউক্রেন দ্বীপটির ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান দিয়ে প্রচন্ড আক্রমণ চালাচ্ছিল। বুধবারের উপগ্রহ চিত্রে দ্বীপটি থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠতে দেখা গেছে। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের একেবারে শুরুর দিকে রাশিয়া এ দ্বীপটি দখল করেছিল। তখন থেকেই এই দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণের জন্য দুইপক্ষের মধ্যে লড়াই চলছিল। দ্বীপটির ওপর ইউক্রেন নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকলেও এক পর্যায়ে রাশিয়া এ দ্বীপটির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ সংহত করেছিল। তারা সেখানে সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল, যা ইউক্রেনের বাহিনী ও যুদ্ধবিমানের জন্য সর্বক্ষণিক হুমকি হয়ে উঠেছিল। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীও যুদ্ধবিমান, কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পালটা হামলা চালাচ্ছিল। ফলে রাশিয়ার জন্য দ্বীপটির ওপর দখল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল বলে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা জানান। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড স্নেক আইল্যান্ড ছেড়ে রুশ সেনারা চলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে। স্নেক আইল্যান্ড পুনর্দখল ইউক্রেনের জন্য একটি বড় বিজয় বলেই মনে করা হচ্ছে। ইউরোপ নিয়ে ন্যাটোর নতুন পরিকল্পনা, রাশিয়ার নিন্দা এদিকে, ইউরোপ নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা ভাবছে ন্যাটো। তারা স্থায়ীভাবে এ মহাদেশটিতে সেনা মোতায়েন করার চিন্তা করছে। বৃহস্পতিবার ন্যাটোর এমন পরিকল্পনার নিন্দা করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, 'মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত রাশিয়া-ন্যাটোর মধ্যে স্বাক্ষরিত শুরুর দিকের আইন লঙ্ঘন করেছে। কারণ ইউরোপে ন্যাটো জোট কর্তৃক স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েনের চুক্তি ওই আইনের লঙ্ঘন।' বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভস্নাদিমির মেকির সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ল্যাভরভ বলেন, ওই আইনটি এখনো বলবৎ রয়েছে, কারণ কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত এটা থেকে পিছু হটেনি। ল্যাভরভ বলেন, 'ন্যাটোর সভায় দীর্ঘ সময় ধরে জোরে আলোচনা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠাকালীন আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা বা এটা পরিত্যাগ করা ভালো হবে কিনা। কিন্তু এই সামরিক জোট বিষয়টি স্পর্শ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ন্যাটো সম্মেলনে ফলের মূল্যায়ন করছে মস্কো এবং শিগগিরই এ বিষয়ে একটি বিশদ বিবরণ দেবে।' এছাড়া ল্যাভরভ ও মেকি উভয়েই সম্মত হন, পশ্চিমারা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আকাশসীমা ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ করার কথা উলেস্নখ করছে। তারা রাশিয়া, বেলারুশ এবং নিজেদের মধ্যে একটি নতুন লৌহ পর্দা স্থাপন করছে। এ বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমি তাদের সাবধানে এসব কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেব এবং কাউকে অপবাদ না দেওয়ার জন্য বলব।'