পাঁচ মাস ধরে যুদ্ধ চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। হাজার হাজার সেনার মৃতু্যতেও শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি নয় কেউই। তবে সময়ের সঙ্গে কিয়েভের অবস্থান যে দুর্বল হয়ে পড়ছে, তা স্পষ্ট। জানা যাচ্ছে, সদ্য গোটা লুহানস্ক অঞ্চল দখল করেছে রুশ বাহিনী। এবার তাদের নিশানায় রয়েছে দনেৎস্ক। ফলে দনবাসের পতন কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
লুহানস্ক ও দনেৎস্ক নিয়ে তৈরি দনবাস অঞ্চল। ২০১৪ সাল থেকেই পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে লড়াই চালাচ্ছে রুশপন্থি বিদ্রোহীরা। গত রোববার রাশিয়া দাবি করে, লুহানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আধিপত্য শেষ করে দিয়েছে তারা। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর লিসিচানস্ক সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার অধীনে চলে এসেছে। এমনটাই বলেছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। গত সপ্তাহেই সেভেরদোনেৎস্ক শহর দখল করেছিল রুশ বাহিনী। সোমবার লুহানস্ক প্রদেশের গভর্নর সেরহিয়ে গাইদাই জানান, এই অঞ্চল দখল করেছে রুশ বাহিনী। এবার তাদের নিশানায় রয়েছে দনেৎস্ক। ফলে ওই অঞ্চলের স্স্নোভিয়ানস্ক ও বাখমুট শহরে প্রবল গোলাবর্ষণ শুরু করেছে পুতিনের বাহিনী।
আবেগ মথিত গলায় সেরহিয়ে গাইদাই বলেন, 'লুহানস্কের পতন অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সেখানেই জন্মেছি। ওই অঞ্চলের প্রধানের দায়িত্ব সামলেছি। এটা কষ্টের হলেও মনে রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে হারিনি। সেনার জন্য ঘাঁটি হাতছাড়া হওয়া ভালো খবর নয়। তবে মাথায় রাখতে হবে শুধু লিসিচানস্ক শহর দখলে রাখার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুদ্ধ জয় করা। আমি মনে হয় না একবারেই সব সেনাকে অন্য কোনো ফ্রন্টে (দনেৎস্ক) পাঠাবে রাশিয়া। কারণ, দখল করা জায়গায় পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তারা যদি সেনা সরায়, আমাদের বাহিনী পালটা প্রত্যাঘাত করবে।'
উলেস্নখ্য, দনবাস অঞ্চলের অর্ধেক এলাকাই লুহানস্কের অন্তর্গত এবং রাশিয়া এখন এই জায়গাটিকেই তাদের যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেছে। যদি দনবাস রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করতে পারেন। এর আগে পূর্ব দনবাসে রাশিয়া এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম দখল করেছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছে। কারণ সেনা, কামান, সাঁজোয়া গাড়ি এবং বিমান বাহিনীর শক্তির নিরিখে রাশিয়া অনেকটাই এগিয়ে।
স্স্নোভিয়ানস্ক শহরে রাশিয়ার হামলা, হতাহত ২৬
এদিকে, ইউক্রেনের স্স্নোভিয়ানস্ক শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। রোববার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরে রুশ হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্স্নোভিয়ানস্ক শহরের পাশাপাশি রোববার রাশিয়ার হামলা হয়েছে আরেক পূর্বাঞ্চলীয় শহর ক্রামতোরস্কেও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই তথ্য জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রুশ বাহিনী রোববার পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্স্নোভিয়ানস্ক ও ক্রামতোরস্কের পাশাপাশি খারকিভ শহরেও হামলা করেছে। এসব হামলায় রকেট সিস্টেমের পাশাপাশি সোভিয়েত আমলের স্মার্চ রকেট দিয়ে গোলাবর্ষণ করেছে তারা। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতিটি শহর ধ্বংস করার জন্য রাশিয়ার কাছে যথেষ্ট অস্ত্র রয়েছে। রোববার রাতে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, 'রাশিয়ার হামলায় শুধু স্স্নোভিয়ানস্ক শহরেই ছয়জন নিহত এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। জেলেনস্কি আরও বলেন, 'ইউক্রেনের একের পর এক শহর ধ্বংস করার জন্য রাশিয়ার কাছে যথেষ্ট স্মার্চ, উরাগান এবং গ্র্যাড সিস্টেম অস্ত্র রয়েছে। তারা এখন দনবাসে তাদের অস্ত্র ও গেলাবারুদের বৃহত্তম মজুত জমা করেছে।'
লুহানস্ক দখল মহাকাশে উদযাপন
করলেন রুশ মহাকাশচারীরা
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) রাশিয়ার সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চল দখল উদযাপন করেছেন রুশ মহাকাশচারীরা। সোমবার চলমান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ এই জয়ের পর উদযাপনে মেতে ওঠেন তারা। রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা 'রসকসমস' লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার দখলে নেওয়াকে 'মুক্তির একটি দিন, যা পৃথিবী ও মহাকাশে উদযাপনের মতো'।
রসকসমসের পক্ষ থেকে রুশ মহাকাশচারী ওলেগ আর্তেমিয়েভ, ডেনিস মাতভিব ও সের্গেই কোরসাকভের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তারা হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্বঘোষিত লুহানস্ক পিপল'স রিপাবলিক ও দনেৎস্ক পিপল'স রিপাবলিকের পতাকা ধরে আছেন।
'টেলিগ্রাম' অ্যাপে রসকসমস লিখেছে, 'এটি একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দিন। লুহানস্ক অঞ্চলের মানুষ আট বছর ধরে দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা নিশ্চিত যে, ২০২২ সালের ৩ জুলাই লুহানস্কের ইতিহাসে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'