বন্দুক সহিংসতা
জাপানকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন আবে
তাকে দেশটির রাজনীতিতে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়
প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
ম যাযাদি ডেস্ক
শিনজো আবে ছিলেন জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তিনি আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতি ও বিশেষ ধরনের অর্থনীতি প্রচলন করার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। এমন অর্থনৈতিক নীতি 'অ্যাবেনোমিক্স' নামে পরিচিত। অধিকাংশ জাপানির মতে তিনি একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ৬৭ বছর বয়সি আবে তার রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দু'বার বিজয়ী করেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম কার্যকাল সংক্ষিপ্ত ছিল। ২০০৬ সালে তিনি প্রথম জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। ওই সময় এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে দেশটিতে তার শাসন চলেছিল। তার সেই এক বছরের শাসনামল ছিল বিতর্কিত। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি সবাইকে বিস্মিত করে আবার ক্ষমতায় এসেছিলেন। এরপর তিনি টানা আট বছর ক্ষমতায় থেকে পরে ২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেন।
তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন জাপান একটি মন্দার মধ্যে ছিল। এ সময় তার অর্থনৈতিক নীতির কারণে জাপানি অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়। তিনি মুদ্রা ব্যবস্থা সহজ করা, রাজস্ব উদ্দীপনা এবং কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেন। আবে ২০১১ সালে তোহোকুতে একটি বিশাল ভূমিকম্প ও সুনামি থেকে জাপানের পুনরুদ্ধারের তত্ত্বাবধান করেছিলেন। ওই দুর্যোগে প্রায় ২০ হাজার লোক নিহত হয়েছিলেন।
২০২০ সালে তিনি প্রধানন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। সেই সময় তিনি 'আলসারেটিভ কোলাইটিস' রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। অন্ত্রের রোগে ২০০৭ সালেও তিনি পদত্যাগের করেছিলেন। ওই সময় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ঘনিষ্ঠ দলীয় মিত্র ইয়োশিহিদে সুগা। তারপরও তাকে জাপানের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়।
কয়েক দশক ধরে সামরিক খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে জাপানের মুখচোরা ভাবেরও অবসান ঘটেছিল আবের হাত ধরে। তিনি ওই খাতে ব্যয় বাড়িয়ে সামরিক সক্ষমতার বিকাশে পদক্ষেপ নেন। তার আমলেই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম দেশের বাইরে যুদ্ধ করার এবং মিত্র কোনো দেশ আক্রমণের শিকার হলে তাদের সুরক্ষায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করে।
আবে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের লেখা জাপানের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুচ্ছেদ বদলে জাপানের 'সেলফ ডিফেন্স ফোর্স'কে আক্রমণাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি পরিপূর্ণ সেনাবাহিনীতে ?রূপান্তরে তার দীর্ঘদিনের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে টোকিওর সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই রাজনীতিক ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাপানকে আবারও বিশ্বশক্তিতে পরিণত করার পথে অনেকটা অগ্রসর হয়েছিলেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে নারা শহরে এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবেকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পড়ে যান তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরও কয়েক ঘণ্টা পর জাপানি গণমাধ্যমে তার মৃতু্যর খবর আসে। জাপানে বন্দুক সহিংসতা বিরল হলেও আবের ওপর এই গুলির ঘটনা জাপানকে 'চিরদিনের' মতো বদলে দেবে বলে অনুমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।