উপহাস যেভাবে অস্ত্র হলো রাশিয়ার

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ দিনগুলোতে মানুষজনের মধ্যে দুঃখ-দুদর্শা নিয়ে হাসিঠাট্টা করার একটা প্রবণতা শুরু হয়েছিল। খাবারের স্বল্পতা, খাবার যোগাড় করতে গিয়ে লম্বা লাইনে দঁাড়ানো, অথৈর্নতিক দুদর্শা এই সবকিছু নিয়ে তখন রাশিয়ানরা কৌতুক করত। কৌতুক আর হাস্যরস যেন দুঃখ ভোলার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। উপহাস দিয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটি নমুনা দেখা গেছে সম্প্রতি যখন যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজন সাবেক গুপ্তচর হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনেছিল। তখন যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় রাশিয়ানদের যুক্ত থাকার অতি সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই দুটি শব্দই এখন রাশিয়াতে একটি কৌতুকের বিষয় হয়ে উঠেছে। সবকিছুতেই রাশিয়া দোষের ভাগিদার হচ্ছে বলে উল্লেখ করে দেশটির সরকারি কমর্কতার্ এমনকি গণমাধ্যমও এই শব্দ দুটি হাস্যরসের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কড়া নিন্দার পাশাপাশি ব্যঙ্গ করে হেসে উড়িয়ে দেয়ার কিছু কৌশল ব্যবহার করছে রাশিয়া। গুপ্তচর হত্যা চেষ্টার জন্য যে দুজন রাশিয়ানকে দায়ী করা হয় তাদের খেঁাজ মিলেছিল ‘দ্য ইনসাইডার’ নামের একটি অনুসন্ধানী রিপোটর্ থেকে। সেটির প্রধান রোমান দোব্রকতভ বলছেন, কোন ঘটনার গুরুত্ব কমাতে হাসিঠাট্টা খুব ভালো কাজে দেয়। রোমান দোব্রকতভ মনে করেন, গুরুত্বপূণর্ রাজনৈতিক বিষয়কে হাল্কা করে ফেলার জন্য রাশিয়ানরা উপহাসকে এখন রীতিমতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তার মতে, উপহাস মানুষের মনে ঘটনার গুরুত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। ধীরে ধীরে তাদের মত পাল্টাতে থাকে। এমন কৌশলের অংশ হিসেবে আজকাল ব্যাপকহারে ইন্টারনেটকে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। ১৯৯০ এর দশকে নাগরিক দুদর্শা নিয়ে প্রচুর ব্যঙ্গাত্মক টেলিভিশন অনুষ্ঠান জনপ্রিয় ছিল রাশিয়াতে। কিন্তু ২০০০ সালে ভøাদিমির পুতিন যখন ক্ষমতায় এলেন তখন এমন ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান রাতারাতি বন্ধ করে দেয়া হলো। তিনি এসব বিষয়বস্তু নিয়ে হাস্যরস করার বিষয়টি যেন ঠিক বুঝলেন না। ভøাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর শুরুতেই তার ক্ষোভের মুখে পড়েছিল একটি ব্যঙ্গাত্মক পাপেট শো ‘কুকলি’। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠানগুলো থেকে ধীরে ধীরে যেন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়বস্তু গায়েব হতে থাকল। এর বদলে তাতে যুক্ত হলো বিদেশী শত্রæদের নিয়ে ঠাট্টা আর পুতিনের গুণগান। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে রাশিয়ায় টিভিগুলোতে ‘কমেডি শো’ গুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমতে থাকে। অথচ একসময় এই অনুষ্ঠানগুলো ছিলো সময়ের কণ্ঠসর। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা হারিয়ে যায়। পুতিনের কৌতুক অনাগ্রহতাকে দায়ী করা হয় কৌতুক শো বন্ধ হওয়ার জন্য। বতর্মানে দেশটিতে অবশিষ্ট যে প্রোগ্রামগুলো প্রচার হচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডামূলক প্রচার প্রচারণা। উপহাস অথবা কৌতুক এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র। সংবাদসূত্র: বিবিসি