তীব্র উত্তেজনা

আবারও সামরিক মহড়া চীনের

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার ওপর চাপ বজায় রাখতেই মহড়া চীন-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নজিরবিহীন টানাপড়েন

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
তাইওয়ানের আশপাশে সমুদ্র ও আকাশপথে আবারও সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। দেশটির সামরিক বাহিনী 'পিপলস লিবারেশন আর্মি'র (পিএলএ) 'ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড' এর আগে তাদের বিবৃতিতে জানায়, সাবমেরিন এবং যে কোনো সামুদ্রিক হামলা মোকাবিলায় এ যৌথ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের অভিমত, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার ওপর চাপ বজায় রাখতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার এই মহড়ার আয়োজন করায় তাইওয়ান প্রণালিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, পার্স টুডে, এএফপি উলেস্নখ্য, গত ৪ আগস্ট পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিক্রিয়ায় এ মহড়া শুরু করে বেইজিং, যা রোববার শেষ হয়। কিন্তু নতুন করে আবারও মহড়ার ঘোষণা দিল চীন। তাইওয়ান অভিযোগ করছে, চীন মূলত স্বশাসিত দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে কীভাবে দখল করবে তারই মহড়া চালাচ্ছে। চীনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সোমবার তাইওয়ানের আশপাশে সমুদ্র ও আকাশে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড চীনা সোশ্যাল মিডিয়া 'উইবো'তে বলেছে, চলমান এই মহড়ায় তারা সাবমেরিন-বিরোধী হামলা এবং সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করবে। তাইওয়ান প্রণালি ও এর আশপাশে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য গত শনিবার চীনকে অভিযুক্ত করে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, 'এই ধরনের কর্মকান্ড উলেস্নখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তাইওয়ানের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। এগুলো উসকানিমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বাড়ায়।' তবে চীন বলেছে, ন্যান্সির পেলোসির সফর তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে 'গুরুতর হুমকি'র মুখে ঠেলে দিয়েছে। উলেস্নখ্য, তাইওয়ান ইসু্যতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালির পূর্বে চীনা মূল ভূখন্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখন্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং। তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যকার চারদিকে সামরিক কর্মকান্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের 'এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন' (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি। চীন-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নজিরবিহীন টানাপড়েন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিস্নংকেন চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইসু্যতে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করা উচিত নয়। ম্যানিলায় তার ফিলিপাইনি সমকক্ষের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই অভিযোগ তোলেন। বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় বিস্নংকেন আরও বলেন, 'আমাদের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টিকারী বিষয়ে সহযোগিতার দ্বার রুদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, আমরা উত্তেজনা নিরসন করতে চাই। উত্তেজনা নিরসনে সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে।' চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক নজিরবিহীন টানাপড়েন বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করে বিস্নংকেন ওই মন্তব্য করেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সম্প্রতি চীনের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে তাইওয়ান দ্বীপ সফরে যান। তারই প্রতিক্রিয়ায় চীন পেলোসি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন পেন্টাগন, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন সর্বনিম্ন স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীন তাইওয়ানের আশপাশে ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করে। সামরিক ইসু্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছিন্ন করেছে। চীন আগেই পেলোসির তাইওয়ান সফরকে 'আগুন নিয়ে খেলা' বলে মন্তব্য করেছে এবং এর অপ্রত্যাশিত পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছে।