অবিশ্বাস্য সাহসী ও শক্ত ওই কিশোররা

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় আটকেপড়া ১২ কিশোরকে বের করে আনার কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে সব বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডুবুরি অংশ নিচ্ছেন, তাদের একজন ইভান কারাজিচ। ডেনমাকের্র এই বিশেষজ্ঞ ডুবুরি থাইল্যান্ডেরই ‘কো-তাও’ নামে ছোট একটি দ্বীপে একটি গুহার ভেতরে ডাইভিং বা ডুব সঁাতার দেয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান। চিয়াং রাইয়ের পাহাড়ের গুহায় কিশোর ফুটবল দলটির আটকে পড়ার খবর প্রচার হওয়ার পর অন্য নানা দেশের অনেক স্বেচ্ছাসেবী ডুবুরির মতো তিনিও ছুটে গিয়ে যোগ দেন উদ্ধারকারী দলে। গত কদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কারাজিচ আটকেপড়া থাই শিশু-কিশোরদের, যাদের অধিকাংশ সঁাতারই জানে না, তাদের সাহসের ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বাচ্চাগুলোকে এমন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আগে কখনো এই বয়সের কোনো কিশোরই হয়তো করেনি। ১১ বছর বয়সে কেভ ডাইভিং (গুহার ভেতরে ডুব সঁাতার) চিন্তারও বাইরে।’ তার ভাষায়, সরু গুহায় ভারী অক্সিজেনের সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে ‘মাস্ক’ পরে ডুব সঁাতার দেয়া যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই বিপজ্জনক। যখন-তখন বিপদ আসতে পারে, নিজের টচের্র আলো ছাড়া সবকিছু অন্ধকার। কারাজিচ বলেন, উদ্ধারের পরিকল্পনার সময় তাদের সবচেয়ে ভয় ছিল বাচ্চাগুলো যদি মাঝপথে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন কীভাবে তা সামাল দেয়া যাবে? কিন্তু এখন পযর্ন্ত যে সব কিশোরকে বের করে আনা হয়েছে, তাদের তেমন কোনো বিপদের কথা উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে শোনা যায়নি। তিনি জানান, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারি না যে, এই বাচ্চাগুলো কতটা সাহসী এবং ঠাÐা মাথার হতে পারে, ভাবতেই পারছি না... দুই সপ্তাহ ধরে ঠাÐা, অন্ধকার গুহায় আটকে ছিল তারা, বাবা-মাকে দেখেনি।’ ইভান কারাজিচের দায়িত্ব- গুহার মাঝামাঝি পথে অবস্থান নিয়ে অক্সিজেন-ভতির্ সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বদলে দেয়া। গত রোববার প্রথম কিশোরটিকে তিনি যখন আসতে দেখেন, অনুভ‚তি কী ছিল তার? তিনি বললেন, ‘মনে মনে অনেক আশঙ্কা ছিল আমার। ৫০ মিটারের মতো দূরে প্রথম যখন একজন ডুবুরি এবং তার পেছনে বাচ্চাটি নজরে এলো, আমি তখনো নিশ্চিত ছিলাম না, সে বেঁচে আছে কিনা। যখন দেখলাম সে শ্বাস নিচ্ছে, বেঁচে আছে, দারুণ স্বস্তি পেয়েছিলাম।’ নাশতায় চকলেট চেয়েছে তারা থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য কমর্কতার্রাও স্বস্তি প্রকাশ করছেন বের করে আনা সব শিশুই ভালো আছে। স্বাস্থ্য সচিব ড. জেটাসাদা চোকেদামরংসুক মঙ্গলবার বলেন, ‘তারা নিজেরাই সবকিছু করতে পারছে।’ একজন কমর্কতার্ জানিয়েছেন, সকালে কয়েকজন নাশতার জন্য চকলেট-রুটি খেতে চেয়েছে। সোমবার কয়েকজন বাসিল পাতা এবং মাংস দিয়ে তৈরি ফ্রাইড রাইস খেতে চেয়েছে। বিবিসির এক সংবাদদাতা টুইট করেছেন, এই শিশুরা অসামান্য, অসাধারণ। বিশ্বকাপের অতিথি এই সাহসী কিশোর ফুটবল দলটিকে মস্কোতে বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ফিফা। কিন্তু থাই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নানা পরীক্ষা এবং পযের্বক্ষণের জন্য কম করে হলেও এক সপ্তাহ তাদের হাসপাতালে থাকতে হবে। তার অথর্ রোববারের ফাইনাল হয়তো তাদের হাসপাতালের টিভিতেই দেখতে হবে। বিবিসির নিক বিক মজা করে ফিফাকে উদ্দেশ্য করে টুইট করেছেন, ‘২০২২ সালের বিশ্বকাপে যেন তাদের বিশেষ অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হয়।’ ফিফার সাড়া অবশ্য এখনো মেলেনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ