মহাকাশ নিয়ে যে কারণে এতো মরিয়া চীন

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহাকাশ জয়ের গল্পে অন্য দেশগুলোর তুলনায় চীন তুলনামূলকভাবে নতুন। কিন্তু অরবিটে প্রথম নভোচারী পাঠানোর মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই চীন বিস্ময় ঘটিয়েছে। সম্প্রতি চঁাদের দূরতম অংশে সফলভাবে ল্যান্ড করিয়েছে চীনের একটি স্পেসক্রাফট। এখানেই শেষ নয়। আসন্ন দশকে নতুন একটি মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করার কথা ভাবছে চীন। পাশাপাশি, চঁাদে একটি বেস ক্যাম্প স্থাপন এবং মঙ্গলে অভিযান চালানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অ্যারোনোটিকেল সোসাইটির ফেলো অধ্যাপক কেইথ হেওয়াডর্ বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, চীনেরও একই অভীষ্ট। প্রথমত, দেশটির সেনাবাহিনী এটি চেয়েছিল। কারণ এই কমর্সূচিতে যত অথর্ খরচ হয়েছে, তাদের আগ্রহ ছাড়া তার অধের্কও পাওয়া সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতা ও সামথর্্য প্রকাশের জন্য এটি একটি দারুণ উপায়। তৃতীয়ত, সন্ধান মেলেনি এমন অমূল্য বস্তু বা এনাজির্ বা জ্বালানির সন্ধান। মূলত এই তিন কারণেই মহাকাশ গবেষণায় এতো অথর্, সময় ও মনোযোগ খরচ করছে চীন। মহাকাশ নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা চীনের এই মহাকাশ গবেষণা কমর্ নিয়ে চাপ বোধ করছে না যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ২০১৮ সালে আগস্ট মাসে স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস স্পেস ফোসর্’-এর কথা। চীনের সবের্শষ সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকার বিশেষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক হেওয়াডর্। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখনো মহাকাশ গবেষণার জন্য প্রচুর খরচা করছে। শুধু নাসার মাধ্যমেই যে এই খরচ হচ্ছে তা নয়। পেন্টাগনও ব্যাপক অথর্ খরচ করছে এই খাতে। কারণ চঁাদে চীনের স্পেসক্রাফট পেঁৗছানোর মাত্র ক’দিন আগেই নাসার আরেকটি সফল অভিযানের মাধ্যমে বরফ-ঢাকা এক নয়া দুনিয়ার খবর এনেছিল। ঠিক এভাবেই প্রতিদ্ব›িদ্বতা হিসেবে বিষয়টিকে দেখছেন না অধ্যাপক হেওয়াডর্। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ইন্টারন্যাশনাল লুনার এক্সপ্লোরেশন ওয়াকির্ং গ্রæপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বানার্ড ফোয়িং বলছিলেন, যে কোনো ধরনের অগ্রগতি বৃহদাথের্ পৃথিবীবাসী সবার জন্যই কল্যাণের। বানার্ড ফোয়িং আরো বলছিলেন, মহাকাশ গবেষণায় চীন অগ্রগতি দেখিয়েছে এবং আন্তজাির্তক অংশীদারদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজের আগ্রহও প্রকাশ করেছে। তবে, সব দেশ চীনের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা সহজ হবে না বলেই মনে করেন তিনি। কারণ দ্বিপাক্ষিকভাবে কারো সঙ্গে নাসা কাজ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধ রয়েছে। তাই, এ ক্ষেত্রে কিছু করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রের জজর্ ওয়াশিংটন ইউনিভাসিির্টর স্পেস পলিসি ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জন লগসন বলছিলেন, চীন আসলে কারো সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতার কারণে মহাকাশ গবেষণা করছে না। বরং নিজেদের নিজস্ব আকাক্সক্ষা থেকেই চীন এতো কিছু করছে। চীনের মহাকাশ গবেষণা প্রোগ্রামে চীনা পৌরাণিক কাহিনীর অনেক উপাদান রয়েছে। যেমন ম্যাগপাই ব্রিজ হচ্ছে চীনের রিলে স্যাটেলাইটের নাম। চীনাদের এ সব নামের পেছনেও রয়েছে দারুণ সব গল্প। যেমন চ্যাঙ-এর কথাই ধরা যাক। চ্যাঙ: চীনের চন্দ্রদেবীর নামানুসারে চন্দ্রাভিযানের নামকরণ হয়েছে। আর এটি চীনের একটি অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। তবে, হ্যঁা এটি অবশ্যই বলা যায় যে, মহাকাশ গবেষণা শুধু রাজনৈতিক লাভা-লাভের ব্যাপার নয়। চ্যাঙ-৪ এর প্রকৃতই বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে বলছিলেন রয়্যাল এস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির ড. রবাটর্ মেসাই। ২০১৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ওইয়্যাঙ নিজেও চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন। ভবিষ্যতের মানুষের জন্য যত এনাজির্ বা জ্বালানির প্রয়োজন হবে সেটিরও হয়তো সন্ধান মিলতে পারে মহাকাশে। সুতরাং সেটি খেঁাজার জন্য চীন প্রচেষ্টা চালাবে। সংবাদসূত্র: বিবিসি