পুতিনের হাতেই ভাগ্য!

সিরিয়া থেকে মাকির্ন সেনা প্রত্যাহার শুরু

হ ২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের সমথের্ন সিরিয়ায় সরাসরি জড়িয়ে পড়ে রুশরা। মস্কোর সহায়তায় আট বছর দীঘর্ গৃহযুদ্ধে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছান বাশার

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানান দেশটিতে লড়াইরত মাকির্ন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র কনের্ল সিয়ান রিয়ান। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়ায় দায়িত্বরত দুই হাজার মাকির্ন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রক্রিয়া শুরু হলো Ñরয়টাসর্
সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান দেশটিতে লড়াইরত মাকির্ন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র কনের্ল সিয়ান রিয়ান। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সিরিয়া থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে নিরাপত্তার কারণে তারা নিদির্ষ্ট সময়, জায়গা ও সেনাদের চলে যাওয়ার কথা বলতে পারছেন না। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় দায়িত্বরত দুই হাজার মাকির্ন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সংবাদসূত্র: বিবিসি সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১১ সাল থেকে। আর গত চার বছর ধরে দেশটিতে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) নিমূর্ল করতে সরাসরি কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু হঠাৎ করেই যুদ্ধ ময়দান থেকে নিজের সেনাদের ফিরিয়ে আনার নিদের্শ দেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষ্য, যথেষ্ট হয়েছে। আইএসকে পরাজিত করা গেছে। এবার সেনাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রেসিডেন্টের নিদের্শ মতো সিরিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ২ হাজার মাকির্ন সেনাকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অনেক আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ, পেন্টাগনে ওলট-পালট, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বাতার্ ইত্যাদির পর ১১ জানুয়ারি থেকে এই সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৯ ডিসেম্বর সেনা প্রত্যাহারের এই আচমকা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সব মিত্রকে বিস্মিত করেছিল। বিশেষত সিরিয়ার কুদির্রা শঙ্কার মুখে পড়েছে। তাদের ধারণা যুক্তরাষ্ট্রের এই সরে দঁাড়ানো আইএসকে পুনগির্ঠত হওয়ার সুযোগ করে দেবে। একই সঙ্গে এই প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসমৃদ্ধ পূবার্ঞ্চলের পূণর্ কতৃর্ত্ব তুলে দেবে ইরান, রাশিয়া ও বাশার সরকারের হাতে। সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দঁাড়ানোর অথর্ই হচ্ছে সেখানে রাশিয়ার ভিত শক্ত হওয়ার সুযোগ। ২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের সমথের্ন সিরিয়ায় সরাসরি জড়িয়ে পড়ে রুশরা। মস্কোর সহায়তায় আট বছর দীঘর্ গৃহযুদ্ধে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছান বাশার। এমনকি বাশারকে অপছন্দ করেন উপসাগরীয় অঞ্চলের এমন স্বৈরশাসকেরাও সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ পুনবর্হাল করে এ জয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় বতর্মানে অনেকগুলো পক্ষ ক্রিয়াশীল থাকলেও সেখানে একচ্ছত্র যদি কেউ এই মুহূতের্ থেকে থাকে, তবে তা রাশিয়া। সিরিয়ায় ইরান, তুরস্ক ও ইসরাইল সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। সেনা প্রত্যাহার মাত্র শুরু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও সক্রিয় অবস্থাতেই গণ্য করতে হয়। কিন্তু এসব কিছু সত্তে¡ও সিরিয়ায় রাশিয়া চাইলে এই সব পক্ষকে হটিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার ক্ষমতা রাখে। তবে এই অবস্থানকে দীঘর্স্থায়ী করে পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে রাশিয়াকে এই ভয়াবহ যুদ্ধের পর দীঘর্স্থায়ী শান্তির দিশা দিতে হবে। এখন পযর্ন্ত এই দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিতে ব্যথর্ হয়েছে মস্কো। বরং উল্টোটাই করছে তারা। বিভক্ত সিরিয়াকে এক করার উদ্যোগ নেওয়ার বদলে রাশিয়া আসাদকে আরও বিচ্ছিন্নতা তৈরিতে সহায়তা করছে। বিরোধী পক্ষকে বোমার আঘাতে উড়িয়ে দিতে কিংবা বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার সবকিছুতেই এই সহায়তা অক্ষুণœ রয়েছে। ইকোনমিস্ট বলছে, সিরিয়ায় আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের দমনে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয়ার সব ধরনের কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। সুন্নিদের মধ্যেই বাশার-বিরোধী অংশ বেশি। এ কারণে সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় নিবির্চার সরকারি হামলা চালানো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সুন্নিদের ফেলে যাওয়া ঘর-বাড়ি ও সম্পদ দখলে শিয়া, খ্রিস্টান ও আলাওয়িত সম্প্রদায়ের লোকেদের সরাসরি সহায়তা করছে আসাদ সরকার। ফলে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে পড়েছে সিরিয়ায়। একই সঙ্গে যুদ্ধ সমাপ্তের কথা বললেও বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া ৬০ লাখ উদ্বাস্তু সিরীয়দের ফিরে আসার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। লেবানন থেকে সিরিয়ায় ফিরে আসতে চাওয়া প্রায় হাজারখানেক সিরীয়কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কিন্তু এসব সত্তে¡ও রাশিয়া বলছে, সিরিয়ার স্থিতিশীলতার স্বাথের্ই বাশারের ‘বজ্র অঁাটুনি’ প্রয়োজন।