মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
যুদ্ধবিরতি শেষ

জয় না আসা পর্যন্ত যুদ্ধ :রাশিয়া

ম পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর রাতভর বোমা হামলায় অন্তত একজন নিহত ম 'প্যাট্রিয়ট সিস্টেম' পাঠানোর জার্মান সিদ্ধান্তের নিন্দা রাশিয়ার
যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ইউক্রেনে একতরফা ঘোষিত যুদ্ধবিরতি শেষ করে এবার জয় না আসা পর্যন্ত দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে রাশিয়া। পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর রাতভর বোমা হামলায় অন্তত একজন নিহত হওয়ার খবর রোববার দিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন এর আগে অর্থোডক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে 'লাইন অব কন্টাক্ট' বরাবর ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন, যা শনিবারও বহাল ছিল। কিন্তু ইউক্রেন আগেই এ যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করার কারণে সম্মুখসারির যুদ্ধক্ষেত্রে গোলা হামলা চলেছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার গোলা হামলায় ৫০ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন বলে 'টেলিগ্রামে' জানিয়েছেন সেখানকার গভর্নর ওলেহ সিনেহুবভ। মস্কো ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইউক্রেনের খেরসনে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলার অভিযোগ এনেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের উপ-প্রধান কিরিলো টিমোশেঙ্কো বলেছেন, ৩৬ ঘণ্টার একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। কিন্তু রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়া একতরফা যুদ্ধ বিরতিকে সম্মান করেছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করেছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দেশটির দনবাস অঞ্চলেও বিস্ফোরণ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এলাকাটিতে কয়েক মাস ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলছে। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, জাপোরিঝিয়া শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ক্রেমলিন বলেছে, মস্কো ইউক্রেনে তাদের 'বিশেষ সামরিক অভিযান' নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। কিয়েভ এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার এই অভিযানকে কোনো উসকানি ছাড়াই ইউক্রেনের ভূখন্ড দখল করতে রুশ আগ্রাসন হিসেবে দেখছে।

পুতিনের প্রথম উপ-প্রধান কর্মকর্তা সের্গেই কিরিয়েঙ্কো রাষ্টীয় বার্তা সংস্থা 'তাস'কে বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশেষ সামরিক অভিযানের জন্য যে কাজ নির্ধারণ করেছেন, তা এখনো পূরণ করা সম্ভব। নিশ্চিতভাবেই জয় আসবে।'

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত বুধবারই বলেছিলেন, রাশিয়া নতুন করে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও বলেছে, পুতিনের ইউক্রেনীয় ভূখন্ড দখলের লক্ষ্যে এখনো বদল ঘটেনি, যদিও তার সেনাবাহিনী যুদ্ধে এখনো ধাক্কা খাচ্ছে।

প্যাট্রিয়ট পাঠানোর জার্মান সিদ্ধান্তের

নিন্দা জানাল রাশিয়া

এদিকে, ইউক্রেনে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান ও 'প্যাট্রিয়ট' আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত জার্মানি নিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, জার্মানির এই পদক্ষেপকে ইউক্রেনের সংঘাত আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে রাশিয়া।

বার্লিনস্থ রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিষয়টিকে ইউক্রেনে চলমান সংঘাত আরও ছড়িয়ে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছি।'

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কিয়েভকে নতুন করে যুদ্ধাস্ত্রের চালান পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্যে এক সমঝোতার পর রাশিয়া এ প্রতিক্রিয়া জানাল। ওই সমঝোতায় বলা হয়েছে, জার্মানি নিজের কাছে থাকা ৫০টি মার্কিন সাঁজোয়া যানের পাশাপাশি নিজস্ব ৪০টি অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনকে একটি প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থা সরবরাহ করার পাশাপাশি এটি পরিচালনার জন্য ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।

বার্লিনস্থ রুশ দূতাবাস আরও বলেছে, ইউক্রেনের জন্য প্রস্তুত এসব সমরাস্ত্র কিয়েভের কাছে পাঠানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, জার্মান সরকার মার্কিন প্রশাসনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে।

উলেস্নখ্য, গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে এই অস্ত্র সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল আমেরিকার জো বাইডেন সরকার। এবার জার্মানিও একই পথে এগোচ্ছে।

ডিসেম্বরে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার সফরের আগে ২১ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনের ঘোষণা ছিল, জেলেনস্কির বাহিনীকে ১৮৫ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দেওয়া হবে। তার মধ্যে ছিল প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র বা 'প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম'।

ইউক্রেনের হাতে প্যাট্রিয়ট তুলে দিতে শুরুতে দোটানায় ছিল জার্মানি। এর জেরে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সরাসরি জড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ। তবে বাইডেনের সঙ্গে ওলাফের বৈঠকের পর ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্যের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। একটি যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমেরিকার মতো ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট দেবে জার্মানিও।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে